উপকূল রক্ষাসহ ২১ দফা দাবীতে ১০৮৮৭ গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি

সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার দাবীতে ১০ হাজার ৮৮৭ জনের গণস্বাক্ষরসহ প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুই ঘন্টাব্যাপি অবস্থান সমাবেশ শেষে বেলা ১টার দিকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।

এরপূর্বে বেলা ১০টা ৪৫টায় শুরু হওয়া অবস্থান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম। সমাবেশের বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এখনো অনেক স্থানে মানুষের বাড়ি ঘর রাস্তা-ঘাটে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হচ্ছে। হাটু পানি-কোমর পানিতে বসবাস করছে সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুর, ইটাগাছা, কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কিন্তু সমস্যা সমাধানে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তেমন কোন কাজে আসছে না।

বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের নদ-নদীগুলোর সাথে এখানকার নদ-নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত্রতত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অপরিকল্পিত মাছের ঘের নির্মাণের কারণে এবং পোল্ডারের ভিতরের পানি নিস্কাশনের খালগুলো লীজ প্রদান ও বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা এখন দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদের ভাটিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও আশাশুনির দক্ষিণাংশ এবং খুলনার কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছার দক্ষিণাংশের বেড়িবাঁধ প্রতিবছর ভাঙছে। আবার ঐ কপোতাক্ষের উজানে পাইকগাছা ও আশাশুনির উত্তরাংশ তালা, কলারোয়া, কেশবপুর, মণিরামপুরসহ উজানের অংশে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। একই অবস্থা খোলপেটুয়াসহ অন্যান্য নদীগুলোর। প্রতিবছরই নদী ভরাট প্রক্রিয়া ভাটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর সেই নদী ভরাটের কেন্দ্রস্থলের আশে-পাশেই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ নদ খননে ৫৩১ কোটি টাকার দ্বিতীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বক্তারা বলেন, একটি পোল্ডার বা একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রকল্প তৈরী করে ভাঙন বা জলাবদ্ধতা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এজন্য উপকুলীয় এলাকা তথা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা নিয়ে সমীক্ষার পর একটি সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের দাবী জানান তারা।

প্রধানমন্ত্রীর বরাবর প্রেরণকৃত স্মরকলিপিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবন্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা, এই এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, দুর্যোগের কারণে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ, সামগ্রীক উন্নয়ন অংশিদার সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবী জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে জলাবদ্ধতার হাত থেকে সাতক্ষীরা শহর বাঁচাতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা, জেলার সকল নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ যতদূর সম্ভব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সকল বাঁধা অপসারণ, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, উদ্ধারকৃত জমি ইজারা প্রদান বন্ধ, নতুন করে অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ বন্ধ, গ্রাম-শহরের পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন স্থানে চিংড়ি চাষ বন্ধ, ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থাপনকারী কুলিয়ার লাবন্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খালের দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু, ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করা, নিচু বিলগুলো উঁচু করতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ, সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু ও বেতনা ও মরিচ্চাপের সাথে সংযুক্ত করা এবং নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ করার দাবীসহ সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে ২১ দফা দাবী জানানো হয়।

এ সময় বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, এড. আবুল কালাম আজাদ, এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সুধাংশু শেখর সরকার, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিকী, আনোয়ার জাহিদ তপন, ওবায়দুস সুলতান বাবলু, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, এড. আল মাহামুদ পলাশ, কমরেড আবুল হোসেন, নিত্যানন্দ সরকার, প্রভাষক ইদ্রিশ আলী, মাধব চন্দ্র দত্ত, অপারেশ পাল, শফিকুল ইসলাম, এড. কাজী আব্দুল্লাহ আল হাবিব, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, মুনসুর রহমান, ইয়ার আলী, আব্দুস সাত্তার, কায়সারুজ্জামান হিমেল, করসার আলী, আব্দুস সামাদ, মমিন হাওলাদার, পরিতোষ বৈদ্দ, আবিদুর রহমান, পিন্টু বাওলীয়া, লুৎফর রহমান, ডাঃ শহিদুল ইসলাম, মনোরঞ্জন ব্যনার্জি, মিজানুর রহমান, মীর জিল্লুর রহমান, আলী নুর খান বাবলু প্রমুখ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

 

মাননীয়,
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ

মাধ্যম: জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা

বিষয়: স্মারকলিপি

মহাত্মন,
আপনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারাদেশে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর পদ্মার এপারের জেলাগুলোতেও উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন যশোর-খুলনা-বাগেরহাট পর্যন্ত এসে পৌঁছালেও সাতক্ষীরা জেলা এখনো অনেকটা দূরে রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নের গতি খুবই ধীর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এই এলাকায় শিক্ষার হার কম। দারিদ্রতার হার দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে মৌলবাদ জঙ্গিবাদসহ নানা সংকটে জর্জরিত এই এলাকা।
আমরা গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী সরকারের সবধরণের উদ্যোগের পরও সাতক্ষীরাসহ উপকূলের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। ঝড়ের পরপরই মাননীয় পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই এই এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করা, দ্রুত বাঁধ নির্মাণসহ সবধরণের প্রতিশ্রুতিও দেন। স্থানীয় জনসাধারণ স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেরা অর্থ দিয়ে বাঁশ, বস্তা, পেরেক কিনে সাতক্ষীরা জেলার বড়ধরণের তিনটি পয়েন্ট ছাড়া আর সকল স্থানে রিংবাঁধ নির্মাণ করে নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ বাঁধার সাথে যুক্ত মানুষদের সহায়তা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাল প্রদান করা হয়। কোন কোন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও বাঁশ, বস্তা, পেরেক নিয়ে সহায়তা করা হয় বলে আমরা জেনেছি। কিন্তু স্বেচ্ছাশ্রমে যেনতেনভাবে পানি বন্ধের পর বাঁধগুলো আরও মজবুত করতে আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। ভেঙে যাওয়া এসব বাঁধের অনেকস্থানে পূর্ব থেকেই ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। অনেকস্থানে ভাঙার পর ডিপিএম এর মাধ্যমে ইমার্জেন্সি কাজ করার জন্য নতুন করে ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়। কিন্তু ইমার্জেন্সি কাজের ও পূর্ব নির্ধারিত অধিকাংশ ঠিকাদার এলাকার কোন কাজ করেননি। এরফলে গত ২০-২৫ আগস্ট অমাবশ্যায় জোয়ারের পানির প্রবল চাপে পূর্বের ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো নতুন করে ভেঙে গিয়ে এলাকায় এক দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের নদ-নদীগুলোর সাথে এখানকার নদ-নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যত্রতত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অপরিকল্পিত মাছের ঘের নির্মাণের কারণে ও পোল্ডারের ভিতরের পানি নিস্কাশনের খালগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা এখন দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর আপনি নিজে সাতক্ষীরার শ্যামনগরসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ব্যাপক কাজও করা হয়। কিন্তু প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত না করে সংস্কার কাজ করায় বেড়িবাঁধগুলো টেকসই হয়নি। প্রতিবছরই ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই ভারী জোয়ারেও বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। আর এবার ভেঙেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও গত ২০-২৫ আগস্ট অমাবশ্যায় জোয়ারের পানির প্রবল চাপে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
কপোতাক্ষ নদের ভাটিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা ও আশাশুনির দক্ষিণাংশ এবং খুলনার কয়রা উপজেলা ও পাইকগাছার দক্ষিণাংশের বেড়িবাঁধ প্রতিবছর ভাঙছে। আবার ঐ কপোতাক্ষের উজানে পাইকগাছা ও আশাশুনির উত্তরাংশ তালা, কলারোয়া, কেশবপুর, মণিরামপুরসহ উজানের অংশে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। একই অবস্থা খোলপেটুয়াসহ অন্যান্য নদীগুলোর। প্রতিবছরই নদী ভরাট প্রক্রিয়া ভাটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর সেই নদী ভরাটের কেন্দ্রস্থলের আশে-পাশেই সবচেয়ে বেশি ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও আপনার সদয় হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে কপোতাক্ষ নদ খননে ৫৩১ কোটি টাকার দ্বিতীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কিন্তু সাতক্ষীরার নাগরিক সমাজ মনে করে, একটি পোল্ডার বা একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রকল্প তৈরী করে ভাঙন বা জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। এজন্য আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ উপকুলীয় এলাকা নিয়ে (বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলা) সমীক্ষার পর সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবী জানিয়ে আসছি।
সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমরা সারাদেশ থেকে পিছিয়ে পড়া সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে নি¤েœাক্ত দাবীগুলো আপনার সদয় সমীপে পেশ করছি:
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবন্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এই এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন করতে হবে। দুর্যোগের কারণে এই এলাকা থেকে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ করতে হবে। সামগ্রীক উন্নয়ন অংশিদার সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বেড়িবাঁধ সংস্কারে স্থানীয় জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
২. জলাবদ্ধতার হাত থেকে সাতক্ষীরা শহর বাঁচাতে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলার সকল নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ যতদূর সম্ভব পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সকল বাঁধা অপসারণ করতে হবে। ডিএস/সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। উদ্ধারকৃত জমি ইজারা দেওয়া যাবে না। নতুন করে আর কোন অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ করা যাবে না। গ্রাম-শহরের পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন স্থানে চিংড়ি চাষ বন্ধ করতে হবে। ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থাপনকারী কুলিয়ার লাবন্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খালের দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালু করতে হবে। ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। নিচু বিলগুলো উঁচু করতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু করতে হবে ও বেতনা ও মরিচ্চাপের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ করতে হবে।
৩. মুন্সীগঞ্জ থেকে নাভারণ পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। ঢাকা-মাওয়া-নড়াইল-যশোর রুটে নির্মাণাধীন রেল লাইন সাতক্ষীরা জেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে। একই সাথে মোংলা-খুলনা-সাতক্ষীরা পৃথক রেললাইন নির্মাণ করতে হবে।
৪. সাতক্ষীরায় দ্রুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে হবে।
৫. জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অভ্যন্তরে একাধিক পর্যটন স্পট নির্মাণ করতে হবে এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের নিকটবর্তী এলাকাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করতে হবে। সুন্দরবনের সম্পদভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে।
৬. ভোমরা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করতে হবে।
৭. অবিলম্বে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে হবে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. সাতক্ষীরায় বেকার সমস্যা সমাধানে শ্রমঘন বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলকে আধুনিকায়ন করে চালু করতে হবে।
৯. সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে।
১০. সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের মেডিকেল কলেজের অংশটি লিংক রোড় হিসেবে চালু করে মূল বাইপাস সড়কটি আলিপুর চেকপোস্টে সংযুক্ত করতে হবে। খ) জেলার চলাচলে অযোগ্য রাস্তাঘাট সংস্কার ও পুন:নির্মাণ করতে হবে। গ) ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এবং আশাশুনির সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাংশেও আর একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে। ঘ) ঢাকার সাথে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমিয়ে আনতে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-নওয়াপাড়া-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
১১. চিংড়ি চাষের কারণে প্রান্তিক কৃষকের জমি হারানো রোধ করতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্ত দিতে হবে।
১২. আম-কুলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্রয় বিক্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কৃষি বাজার নির্মাণ করতে হবে। বিভিন্ন ফল, শাক-সবজী ও দুধ সংরক্ষণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী উপজেলায় আধুনিক হিমাগার ও সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও কৃষিভিত্তিক ইকোভিলেজ মার্কেট স্থাপন করতে হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
১৩. মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে জেলার বিভিন্ন ফিডার রোডে চলাচলরত হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইঞ্জিন ভ্যানের আধুনিকায়ন করতে হবে। স্থানীয়ভাবে এগুলোর চলাচলের লাইসেন্স দিতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
১৪. জেলার সাথে সকল উপজেলার সরাসরি যাতায়াতের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। লক্কর-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। সাতক্ষীরায় বিমানের অফিসসহ যশোর বিমান বন্দরে যাতায়াতের জন্য বিমানের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. লবণাক্ত, আর্সেনিক ও আয়রণমুক্ত নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. শহরে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনসহ সিটি সার্ভিস চালু করতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করতে হবে।
১৭. জেলার সকল সরকারি দপ্তরে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
১৮. শিশুর বিকাশের জন্য জেলা সদর ও প্রত্যেক উপজেলা সদরে শিশুপার্ক নির্মাণ করতে হবে। সকল সরকারি অফিস ও পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডার কর্নার স্থাপন করতে হবে। যানবাহনে নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীনদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৯. সাতক্ষীরায় জেলা সদরসহ সকল উপজেলায় আধুনিক মানের স্টেডিয়াম, ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে।
২০. সাতক্ষীরা’র সকল পূরাকীর্তি সংরক্ষণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২১. জেলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অতএব, উক্ত দাবীর স্বপক্ষে সাতক্ষীরার ভুক্তভোগী মানুষের গণস্বাক্ষরসহ এই স্মারকলিপি পেশ করছি এবং সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে উল্লিখিত দাবীসমূহ মূল্যায়নপূর্বক সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নসহ উপকূলবাসীকে রক্ষা করতে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক নির্দেশ প্রদানের সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

ধন্যবাদান্তে

মো. আনিসুর রহিম
আহবায়ক
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি
০১৭১১১৫১৪৪৭

আবুল কালাম আজাদ
সদস্য সচিব
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি
০১৭১১৮২২৭৫৭

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।