সাতক্ষীরায় সবজি চাষীদের মাঝে কৃষি প্রণোদনার এক কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা কাজে আসেনি: চাহিদীর তিনগুণ বেশি উৎপাদনের পরও সবজির বাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় সবজি চাষীদের মাঝে সরকারের দেয়া পনে দুইকোটি টাকা তেমন কাজে আসেনি। রাজনৈতিক বিবেচনায় কৃষি প্রণোদনা দেয়ায় প্রকৃত চাষীরা এর সুফল পায়নি। সাতক্ষীরার উৎপাদিত সবজি এখন ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কিক্রি হচ্ছে। জেলাতে সবজি উৎপাদন বেশি থাকলেও বছরের যে কোন সময়ের চেয়ে বাজারের সবজির দাম বেশি। তাও দীর্ঘসময় ধরে। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে দরিদ্র, অতি দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবনে। জন প্রতি ২৫০ গ্রাম সবজির চাহিদা ধরে চলতি মৌসুমে জেলায় সবজির চাহিদা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৩১৪ মে:টন। যেখানে উৎপাদনের পরিমান নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৩১৪ মে:টন। ফলে ৮৩ হাজার ৬৮৫ মে:টন সবজি উদ্বৃত থাকার কথা। কৃষকরা বলছে সবজির উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। চাষীদের অভিযোগ সরকার প্রকৃত সবজি চাষীদের মাঝে সরকারী প্রণোদনা না দিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রণোদনা দেয়ার কারণে সবজির উৎপাদন খরচে কোন প্রভাব পড়েনি। ফলে চলতি মৌসুমে জেলাতে সবজি চাষীদের মাঝে দেয়া এক কোটি ৭৫ লক্ষ ১৮ হাজার ৪শ টাকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। ৯ হাজার ৮৩৫ জন চাষীর নামে এসব বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। প্রকৃত সবজি চাষীদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা পেলে উৎপাদন খরচ কম হলে সবজির দাম তুলনা মূলক কম থাকতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বর্তমানে জেলার বিভিন্ন বাজারে মানভেদে চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুমুখী ৫০ থেকে ৬০ টাকা ,বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকাকেজি দরে। ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, ঝিঙার কেজিও ৬০ টাকা।
পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দাম বেড়ে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা দরে।

কৃষকরা বলছে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। পাশাপশি চলতি মৌসুমে সবজির ফলন ও তুলনা মূলক ভাল না। এছাড়া সবজি ও কৃষিতে সরকারী প্রণোদনারও সমালোনা করেন তারা। অভিযোগ উঠেছে দলীয় বিবেচনায় তালিকা করে কৃষিতে সরকারী সহয়াতা দেয়া হয়েছে। এতে কৃষকের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সহযোগীতা পেয়েছে। যার কোন কৃষি জমি নেই এমন লোকেরও কৃষি প্রণোদনা দেয়া অভিযোগ উঠেছে। একই অবস্থা সারাদেশে।

সরকারী হিসাব মতে শুধু সাতক্ষীরা জেলাতে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত্র কৃষকদের পুনবাসন কর্মসূচির আওয়তায় বসত বাড়িতে শাক-সবজি চাষ করতে ৩ হাজার চাষীসহ সাত হাজার ২শ চাষীর মাঝে বীজ ও সার বাবদ এক কোটি ১৬ লক্ষ ১৬ হাজার বিতরণ করা হয়েছে। সবজি চাষে জনপ্রতি বীজ ২৯০ গ্রাম,ডিএপি-১০ কেজি ও এমওপি-১০ কেজি প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধীদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী এসব বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১১৫৯ জন চাষী , কলারোয়া এক হাজার জন চাষী, তালায় ১১শ চাষী, দেবহাটায় ৬শ চাষী, কালিগঞ্জে ৯৫০ জন চাষী, আশাশুনিতে এক হাজার চাষী,ও শ্যামনগরে ১৪শ চাষীর মাঝে এসব কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়। জন প্রতি ১৬শ তের টাকা মূল্যে বিজ ও স্যার বিতরণ করা হয়। খলিষখালিতে এক জন চাষী জানান ,তার নামে একটা চাষী কার্ড দেয়া হয়। স্থানীয় ওয়ার্ডের সরকার দলীয় সভাপতির মাধ্যমে তিনি কার্ডটি পান। পরে সেই সভাপতি তাকে ৬শ টাকা দেন। আর বলেন টাকা তুলতে অনেক খরচ হয়েয়ে। জেলার বেশির ভাগ জায়গাতে এ ভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় চাষীর মাঝে বন্টনের শোয়া কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া পারিবারিক কৃষির আওয়তায় সবজি পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পে জেলার ২২শ৪০ টি পরিবারে ২৬৩৫টাকা হারে ৫৯ লাখ ০২ হাজার ৪শ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন প্রতি ৩২ টি পরিবার ধরে জেলায় ৭০টি ইউনিয়নে ২২৪০টি পরিবারের মাঝে এসব টাকা বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে জনপ্রতি নগদ সহায়তা ১৯৩৫ টাকা, বীজ ৪শটাকা,সাইনবোর্ড ৩শ টাকা।

বিতরণের নামে এসব টাকা লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রকৃত সবজি চাষীদের উৎপাদন খরচ বেড়ে। যে কারণে সবজির দামও বাড়তি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জেলা কৃষিখামার বাড়ি সূত্র মতে চলতি খরিপ-১/২০২০-২১ মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২২৫০ হেক্টর, কলারোয়া ৯৫০ হেক্টর, তালায় ১৬শ হেক্টর, দেবহাটায় ২৩০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৪শ হেক্টর, আশাশুনিতে ৫৫০ হেক্টর, ও শ্যামনগরে ৫২০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে।

হেক্টর প্রতি ১৮ মে:টন নির্ধারণ করে ১৩৫ হাজার মে:টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম সবজি খেলে জেলাতে দৈনিক সবজির চাহিদা দাঁড়ায় ৫৭০.১৭ মে:টন। তিন মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৩১৪ ম:টন। ১০১৬ কেজিতে এক মে:টন ধরে তিন মাসে জেলাতে সবজির চাহিদা দ^াড়ায় ৫ কোটি ২১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯ কেজি ৫২ গ্রাম। এদিকে জেলায় চলতি মৌসুমে এক লক্ষ ৩৫ হাজার মে:টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

জেলা কৃষি উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা জেলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি চাষ হচ্ছে। কিন্তু দেশের ৩৩টি জেলায় বন্যা বিরাজমান থাকায় সাতক্ষীরা সবজি সেইসব এলাকাতে পাঠানো হচ্ছে। ফলে জেলার বাজার গুলোতে সরবরাহ থাকলেও দাম একটু বেশি। এদিকে চলতি মৌসুমে জেলাতে সবজি চাষীদের মাঝে দেয়া এক কোটি ৭৫ লক্ষ ১৮ হাজার ৪শ টাকা যথাযথ নিয়মে বিতরণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনীদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করা হয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।