হাটহাজারী দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর আমীর ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান।
শুক্রবার এক শোকবাণীতে তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেফাজতে ইসলামের আমীর খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে আনা হলে সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আমি তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
শোকবাণীতে তিনি আরো বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন আলেম-উলামা ও তৌহিদী জনতার প্রিয় রাহবার। তার ইন্তেকালে দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সারা জীবন ইসলামের খেদমত করে গিয়েছেন। তিনি দেশে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন। তিনি বহু আলেমের উস্তাদ। ইলমে দ্বীনের খেদমতের জন্য যুগ যুগ ধরে এ দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তার ইন্তেকালে জাতি একজন খ্যাতিমান আলেমে দ্বীনকে হারাল। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন। আমি তার শোকাহত পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
ছাত্রশিবিরের শোক
শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রহ.) অন্যতম খলিফা, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশেরর আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ শোক বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহিমাহুল্লাহ আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। তাঁর ইন্তেকালে জাতি এক মমতাময় অভিভাবককে হারালো। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয় বরং দক্ষিণ এশিয়ার একজন উজ্জল নক্ষত্র। ছাত্রজীবনে তিনি এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দ হতে কৃতিত্বের সাথে পড়াশোনা করেন এবং শাইখুল ইসলাম হজরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীর (রহ.) এর খিলাফত প্রাপ্ত হন। দেওবন্দ মাদরাসায় পড়ালেখা শেষে আল্লামা মাদানীর প্রতিনিধি হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসেন শাহ আহমদ শফী এবং চট্টগ্রামে আল্-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ১৪০৭ হিজরিতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি উক্ত মাদরাসার মহাপরিচালকের পাশাপাশি শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি বাংলার জমিনে লক্ষ লক্ষ আলেম তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও উর্দু ভাষায় প্রায় ৪০টিরও অধিক বই লিখেছেন।
অন্যদিকে তিনি ছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সবার নিকট শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তিনি দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রসার, আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধকরণ ও ইসলামবিরোধী সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। ইসলাম, দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার রক্ষায় তিনি ছিলেন আপসহীন। ভারতে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ, ফারাক্কাবাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ, তাসলিমা নাসরীন কর্তৃক ইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে আন্দোলন, সরকারের ফতোয়াবিরোধী আইন প্রণয়নের প্রতিবাদ ও নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি আলেম সমাজ ও সাধারণ জনগণকে একত্রিত করে তীব্র গণআন্দোলন সৃষ্টি করে আল্লাহর রহমতে নাস্তিক্যবাদের আস্ফালন স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁর ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত বলিষ্ঠ। জাতির ক্রান্তিকালে তাঁর মত প্রবীণ আলেমে দ্বীনের ইন্তেকাল হলো। ইসলাম, দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আলেম সমাজ ও জাতি চিরকাল মনে রাখবে ইনশা-আল্লাহ।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রিয় এ আলেমে দ্বীনকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি।