‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

ক্রাইমবার্তা রিপোট :  ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’, সংবাদপত্রে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও তার কথাবার্তা ও চলনে কানাডা প্রবাসী ভেবে ভুল করেছেন অনেকে। তার ফাঁদে পড়ে খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

গত ১১ বছর ধরে পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন জান্নাতুল। অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অভিযানে তার কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমোরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।

তিনি বলেন, গত ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞান দেয়া হয়, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভাের্সি সন্তানহীন বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যােগাযােগের জন্য ঠিকানা- বারিধারা’। সঙ্গে একটি মােবাইল নম্বর দেয়া। জান্নাতুল তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করেন। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, বিজ্ঞাপন দেখে মাে. নাজির হােসেন প্রতারক জান্নাতুলের মোবাইল ফোনে যােগাযােগ করেন। এক পর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন, জান্নাতুলের এসব কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপাের্ট দেন। পরে প্রতারক জান্নাতুল জানান, কানাডায় প্রচন্ড শীত তাই সেখান থেকে তার দুইশ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবেন। পরে দেশেই ব্যবসা করবেন।

তিনি বলেন, ডিএইচএলর মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিএইচএল বিল বাবদ মােট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস।

ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, এভাবে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন জান্নাতুল। তার একটি হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫-৩০ কোটি টাকার হিসাব আমরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আমরা সেগুলোতে ১ কোটি টাকা পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়ে গেলে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতেন। এই চক্রের আরও সদস্যদের গ্রেফতার চেষ্টা চলছে।

Check Also

আ.লীগের পুনর্বাসন রুখে দিতে তৈরি হাসনাত-সারজিসরা

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন রুখে দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্যে। জুলাই শহীদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।