কেশবপুর (যশোর) : পাট ও পাটখড়ি থেকে কার্বন উদ্ভাবন করে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছেন কেশবপুরের দুই খ্যাতনামা গবেষক ড. আব্দুল আজিজ ও ড. আবুল কাশেম। মূল্যবান এ কার্বন দূষিত বায়ু ও পানি পরিশোধনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। গবেষকদ্বয় পাট থেকে তৈরি এই কার্বন বিশ্বময় পৌঁছে দিতে চান। তাদের আশা, এটা করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সহায়তায় তারা পাট ও পাটখড়ি দিয়ে অত্যন্ত মূল্যবান উপাদান কার্বন তৈরি এবং তার ব্যবহার নিয়ে একটি ‘রিভিউ পেপার’ লিখেছেন। খ্যাতনামা জার্নাল দ্য কেমিক্যাল রেকর্ডে সম্প্রতি তা প্রকাশিত হয়েছে। রিভিউ পেপারটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এটিকে কার্বন, গ্রাফাইট এবং গ্রাফিন বিভাগে ‘হট টপিক’ শ্রেণিভুক্ত করেছে জার্নালটি। এ গবেষণায় সহায়তা করেছেন ড. আব্দুল আজিজের পিএইচডির ছাত্র সাঈদ শাহীন শাহ। বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী ড. আব্দুল আজিজ যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। সেখানে পুশান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ন্যানোম্যাটেরিয়াল বেইজড ইলেকট্রো অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রি’তে পিএইচডি অর্জন করেন। এরপর জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়াল কেমিস্ট্রি বিভাগের ন্যানোম্যাটেরিয়াল ল্যাবরেটরিতে দুই বছরের গবেষণা শেষ করেন। তিনি সৌদি সরকারের আহ্বানে কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং বর্তমানে সেখানে কর্মরত আছেন। বায়োসেন্সর ও পরিবেশ গবেষক ড. আবুল কাশেম একই ইউনিয়নের আওয়ালগাঁতী গ্রামের সন্তান। ড. কাশেম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সে প্রথম শ্রেণিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করে সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য জাপানে যান। জাপানের তয়মা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে দেশটির নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি জাপানে কর্মরত।
গবেষক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, পাট ও পাটখড়ি থেকে অ্যাক্টিভেটেড বা কার্যকরী কার্বন, গ্রাফিন ও অন্যান্য মূল্যবান কার্বন তৈরি করা সম্ভব। এগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। পাট ও পাটখড়ি থেকে এই কার্বন তৈরিতে খরচ কম। পদ্ধতিটা সহজ ও পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়া এই কার্বনের পৃষ্ঠতলের আয়তন বেশি হওয়ায় কর্মক্ষমতা অনেক বেশি।
ড. আবুল কাশেম বলেন, পৃথিবীব্যাপী বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশের মূল্যবান উপাদান পানি, বায়ু ও মাটি। ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। আর এই দূষিত বায়ু ও পানি পরিশোধনে মূল্যবান এনার্জি স্টোরেজ (শক্তি সঞ্চয়) ডিভাইসে অ্যাক্টিভেটেড কার্বন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।