প্রখ্যাত দ্বীনি আলেম আল্লামা শফির মৃত্যুর পর কয়দিনেই পাল্টে যাচ্ছে হাটহাজারীর দারুল উলূম মইনুল ইসলাম মাদ্রসার দৃশ্যপট। এরমধ্যে মাদ্রাসার মুহতামিত ও শিক্ষা পরিচালকের পদ পরিবর্তন ছাড়াও নতুন করে অব্যাহতি পেয়েছেন আরও দুই শিক্ষক। পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে আগে অব্যাহতি পাওয়া চার শিক্ষক। মাদ্রাসার মজলিসে শুরায় নতুন করে যোগ হয়েছে আরও ছয়জন সিনিয়র মুহাদ্দিস। পরিবর্তন এসেছে কিতাব বণ্টনেও। মাদ্রাসা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে আল্লামা শফীর অনেক স্মৃতি চিহ্নও। সব মিলিয়ে নতুন এক দৃশ্যপট তৈরী হয়েছে। অথচ হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা খ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটির পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বড় হুজুর খ্যাত আল্লামা শাহ আহমদ শফির নানা স্মৃতি চিহ্ন। যা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকার কথা।
কিন্তু আল্লামা আহমদ শফীর জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ গত বুধবার জোহরের নামাজের পর তার মরহুম পিতার ব্যবহৃত কিতাব, খাট তোষক, মেডিকেল বেড ও আসবাবপত্রসহ নানা সরঞ্জামাদি মিনি ট্রাকে করে নিয়ে যান।
মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এ প্রসঙ্গে বলেন, হুজুরের ব্যবহৃত এসব জিনিস আমাদের কাছে শেষ স্মৃতি। এসব স্মৃতি পারিবারিকভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এসব স্মৃতি নিয়ে আমরা তার আদর্শ ধারণ করে বেঁচে থাকতে চাই। আর এ নিয়ে টু শব্দটিও করেননি মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের কেউ। এ ব্যাপারে কোন কথা বলতেও রাজী নন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কেউ।
তবে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে আল্লামা শফীর স্মৃতি চিহ্নগুলো সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী আল্লামা এনামুল হক তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘দেওবন্দসহ বিভিন্ন জামিয়াতে আকাবিরদের স্মৃতিচিহ্ন সম্বলিত এক কক্ষ আছে। যেখানে তাদের রচিত কিতাবাদি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হয়। পরিদর্শকরা এতে উপকৃত হয়, প্রভাবিত হয়। দারুল উলুম হাটহাজারীতেও এমন একটি কক্ষ তৈরি করলে সেটা অন্য মাদ্রাসার জন্যও অনুসরণীয় হতো।’ সাঈদুল ইশতিয়াক নামে একজন ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন, শাইখুল ইসলাম এর সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার জন্য। আজ তার আসবাবপত্র ও স্মৃতিচিহ্নগুলো পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছবিগুলো দেখে খুব কষ্ট লাগছে। কর্তৃপক্ষ ও পরিবার চাইলে শাইখুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্নগুলো রাখার উদ্যোগ নিতে পারতেন। তার এই পোস্টে অনেকেই একমত প্রকাশ করেছেন।
শুধু তাই নয়, মাদ্রাসার শুরা কমিটির গৃহীত পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক গত মঙ্গলবার রাতে শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ উসমান ও মাওলানা তকিউদ্দিন আজিজকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এটি আন্দোলনকারী ছাত্রদের ৬ দফা দাবির একটি। মাদ্রাসার প্রয়াত মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী থাকাকালীন এ দুজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে আল্লামা শফির মৃত্যুর আগে অব্যাহতি পাওয়া চার শিক্ষককে পুনর্বহাল করা হয়েছে। চার শিক্ষক হলেন-মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা সাঈদ আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ হাসান ও মাওলানা মনসুর।
প্রসঙ্গত, আল্লামা আহমদ শফী ১৯৪৬ সালে এই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পান তিনি। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও পালন করেন। ৪০ বছর শিক্ষকতা ও ৩৪ বছর ওই মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদে আসীন ছিলেন মৃত্যুর একদিন আগ পর্যন্ত। কিন্তু ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করে হাসপাতালে ভর্তি হন শতবর্ষী এ আলেম। এরপর দিন ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সর্বোপরি কওমি অঙ্গনের শীর্ষ আলেমরা বলছেন, মাদ্রাসার অভ্যন্তরে মসজিদের সামনে তার কবরটাও দৃশ্যপট বদলের স্তম্ভ হয়ে রয়েছে। আল্লামা শফী পরবর্তী হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিবর্তন দেশের শিক্ষা ও ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।