রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডা প্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি কারাগারে কান্নাকাটি করছে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট:   বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছেছে। গতকাল সকাল পৌনে ১১টায় তা হাইকোর্টের আদান-প্রদান শাখায় এসে পৌঁছায়। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬  আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছেছে। মামলার রায়ের কপিসহ চার শতাধিক পৃষ্ঠার নথিপত্র হাইকোর্টে নিয়ে আসেন বরগুনা আদালতের জারিকারক জাহাঙ্গীর আলম পিকু। হাইকোর্টের আদান-প্রদান শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা কে এম ফারুক হোসেন নথিটি গ্রহণ করেন।
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ৩০শে সেপ্টেম্বর তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), হাসান বন্ড (১৯)। এ ছাড়া মুসা বন্ড (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)কে খালাস দেয়া হয়েছে।
মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছি। রায় পর্যালোচনা করে আপিল করা হবে।

গতকাল মিন্নির বাবা  মোজাম্মেল হোসেন কিশোর হাইকোর্টে আসেন তার আইনজীবীর চেম্বারে। তিনি বলেন, মিন্নি নির্দোষ। একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্র করে তার  মেয়েকে এ মামলায় ফাঁসিয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলকে আড়াল করার জন্যই তার মেয়েকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। আমি আশাবাদী আমার মেয়ে উচ্চ আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হবে। তিনি বলেন, কারাগার থেকে মিন্নি আমার ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে  ফোনে কথা বলেছে। সে খুব কান্নাকাটি করেছে। কারাগারে মিন্নি ভালো নেই। তাকে একা একটি নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। সে জন্য মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠাতে হয়। এরই আলোকে এ মামলার রায়ের কপি, সাক্ষীদের বক্তব্যসহ মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে এলো। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল দায়ের করে থাকেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী এ মামলার পেপার বুক তৈরি হবে। এরপর প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য যে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন সেই বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬শে জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।ওই ঘটনার একটি লোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে। আর তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেকে তার এ চেষ্টাকে অভিনয় হিসেবে মন্তব্য করেন। পরে ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়। কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুললে আলোচনা নতুন মোড়  নেয়। ১৬ই জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সেদিন রাতে তাকে রিফাত হত্যা মামলায়  গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Check Also

নতুন উপদেষ্টাদের নিয়ে অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখব : মাহফুজ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, জনগণের পক্ষ থেকে জনগণের মনোনীত সরকার আমরা। জনগণের প্রতিনিধিত্ব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।