ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সচেতন মানুষ। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীরা প্রতিদিনই মিছিল সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
এ আন্দোলন নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি আছে, তবে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ সরকার। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। তা ছাড়া সরকারবিরোধী জোট ইস্যু বানিয়ে আন্দোলনের গতিবিধি যাতে ভিন্ন দিকে মোড় না নিতে পারে সে দিকটাও সতর্কভাবে দেখছে সরকার। পাশাপাশি আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণীমহল প্রতিনিয়ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি নির্মূলে এবং অপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সব সময় হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়। তবে বেগমগঞ্জের ঘটনায় আন্দোলনের মাত্রা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই ঘটনা যখন সামনে চলে আসে তখন থেকেই অপরাধীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। তারপরও সরকারবিরোধী জোট একে ইস্যু বানিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে রং চং লাগিয়ে তারা সরকারের পতন দাবি করছে।
এর আগেও বিএনপি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই আশা ব্যর্থ হয়েছিল। চাকরিতে কোটা সংস্কার করার মাধ্যমে আন্দোলন দমানো হয়েছিল। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। তাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে।
ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধন করার জন্য সংশোধিত আইন আজ মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে। সংশোধিত আইন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এই আইন পাস হলেই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনও মাঠে মারা যাবে। বিশেষ করে যারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দিতে চায়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) ফারুক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি ঘৃণ্য অপরাধ। আমাদের দেশে সচেতনতার অভাব, সামাজিক শিক্ষার অভাব, আইনের দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন অতীতেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে, এটা সব সময় হয়। তবে এখন একটু বেশি হচ্ছে। আমি মনে করি, ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি না করে এটার সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।
তিনি বলেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়, তবে এটা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটবার মতো কিছু নেই। ধর্ষণবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত, যাতে আমাদের সন্তানরা রক্ষা পায়, সমাজ রক্ষা পায়। তিনি বলে, আওয়ামী লীগ এবং সরকার একে অপরাধ হিসেবে দেখছে। ধর্ষকরা কখনোই পার পাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ফারুক খান বলেন, আমি যতটুকু জানি, ধর্ষকদের শাস্তির বিধান আরো কঠোর হচ্ছে। সংশোধিত আইন নিয়ে আগামীকাল মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশে বর্তমানে যেসব অনভিপ্রেত ঘটনা বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে, আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে যে প্রতিবাদ হচ্ছে, প্রতিবাদ হবে, সেটা স্বাভাবিক এবং প্রতিবাদ হলে সরকারের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়াও সহজ হয়। কিন্তু এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে যারা সেখানে সরকারের পদত্যাগ চায় কিংবা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করে, তখন বুঝতে হবে তাদের উদ্দেশ্য নারী এবং শিশু নির্যাতনকারীদের শাস্তি দেয়া নয়, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই ইস্যুর আড়ালে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করা এবং বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার একটি অপচেষ্টা। এ বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নারী নির্যাতনের ঘটনাকে রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা করছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে রাজনীতির অপচেষ্টা ঠিক নয়। ধর্ষকরা কোনো দলের নয়। নোয়াখালীতে যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল তারা কোনো দলের না, সবাই দুষ্কৃতকারী। প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার হচ্ছে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ধর্ষকদের শাস্তির ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আপনারা দেখেছেন, যেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। চার্চের ফাদার বলেন, মন্দিরের পুরোহিত বলেন আর দলীয় নেতাকর্মী বলেন কেউ অপরাধ করে পার পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, যারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন করছে, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আইন দাবি করছে আওয়ামী লীগ তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে কেউ কেউ জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কটূক্তি করছে, সরকারের পদত্যাগ চাইছে। এ থেকে বোঝা যায়, যারা সরকারের পদত্যাগ চাইছে তাদের দাবি আর বিএনপির দাবি একই। এর মাধ্যমে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাচ্ছে। তবে সে আশা পূরণ হবে না। সরকার সতর্ক রয়েছে।
এস এম কামাল হোসেন বলেন, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন সংশোধন করার কাজ চলছে। আইন শিগগিরই পাস হয়ে যাবে। এরপরও যদি কেউ আন্দোলন করে তাহলে বুঝব ওরা ধর্ষকদের শাস্তি চায় না, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে স্বার্থ হাসিল করতে চায়। আমি বিএনপিকে আহ্বান জানাই, তারা যেন এই ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করে।