ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যক্তা

* ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যক্তা হওয়ার গল্প: এলইডিপি থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে সাবলম্বী হওয়ার উপায়ঃ
*তিন মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্র্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে লক্ষ টাকা আয়
সাতক্ষীরার ছেলে আবু সাইদ বিশ্বাস ফ্রিল্যান্সি এর মাধ্যমে সাবলম্বী

আবু সাইদ বিশ্বাস: ফ্র্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করে আজ আমি সাবলম্বী । লোকাল মার্কেট প্লেস থেকে কয়েক লক্ষ টাকা আয় করে ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যক্তা হতে চলেছি। আমার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে আরো কয়েকজন। সারাদিন কাজ আর কাজ। বসে থাকার মহ হাতে যেন এক মুহূর্ত সময় নেই। পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল,বীমা,বিনোদন সাইট,ভিডিও,ব্লগ,ব্যাক্তিগত নানা ধরণের ওয়েভ সাইট ডিজাইন ও ডেভোলাপ তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছি।

মাত্র কয়েক বছর আগেও আমি বেকারাত্বের করাল গ্রাসে লেখা পড়া করেছি। ঠিক মত খেতেও পারিনি। ছাত্র জীবনে কখনো এক বেলা আবার কখনো দুবেলা দুমুঠো ভাত পেটে দিতে পেরেছি। তিন বেলা খেতে পেরেছি এমন দিনের সংখ্যা হাতে গোনা। অন্যের জমিতে হাল চাষ করে অর্থ উপার্জন করে পড়া লেখার খরচ চালিয়েছি। যা আমার পরিবারসহ গ্রামের লোকজন সকলে জানে। ছাত্র জীবনের সেইসব কথা মনে পড়লে আমার চোখে পানি এসে যায়। ৪ ভাই ও ৫ বোনের অভাব অনাটনের সংসারে আমার বেড়ে উঠা। বাবার ভিটা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই বললেই চলে। আমি যখন ৬ষ্ট শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার রেজাউল করিমের বাগানের সুপারি গাছ থেকে সুপারি, নারকেল গাছ থেকে নারিকেল পেড়ে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে বই খাতা কিনে পড়া লেখা করেছি। আমার কোন পোষাক পাতি বাবা মা কিনে দেছে তা আমার মনে পড়েনা। পরবর্তি জীবন গুলো সে এক ইতিহাস। বেরাকত্ব কি জিনিস তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।

কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে আজ আমি অনেকটাই সফল। ২০০৬ সালে বিএ পড়ার সময় এক বন্ধুর পরামর্শে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আমি ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটারে একটি কোর্সে ভর্তি হয়। কোর্স শেষ করে নিবন্ধন দিয়ে সাতক্ষীরা শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারে শিক্ষকতা শুরু করি। শুরু করেই সংসারের হাল টানতে হিমশিম খেতে হয়। সামান্য চাকুরির টাকায় সংসার চালানো ও ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ বহন করা আমার পক্ষে অনেক কষ্ট হয়।
কলেজে পড়ার সময় এক বন্ধুর পরামর্শে সাংবাদিকতা শুরু করি। কিন্তু মফস্বলে যেখানে বৈধ পথে আয়ের তেমন সুযোগ না থাকায় আমাকে বিকল্প পেশা খুজতে হয়। শুরু করি ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো। আয়ের কিছু একটা পথ খুজে পাই। কিন্তু অবসর সময় কাটাতে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহাররে দিকে ঝুকে পড়ি। দীর্ঘ সময় ফেসবুক ও ইউটিউভ চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এরই মধ্যে সংসারে সদস্য বেড়ে যায়। খরচও বাড়ে পাল্লা দিয়ে। খুজতে থাকি বিকল্প আয়ের সন্ধানে।

হঠাৎ একদিন ফেসবুকে দেখি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক জনাব এসএম মোস্তফা কামাল ফ্র্রিল্যান্সিং এর উপর কথা বলছে। সেই কথা শুনে আমি ফ্রিল্যান্সার হতে আগ্রহী হয়। পরে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রানালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিনামূল্যে লার্নিং এন্ড আনিং ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্সে আবেদন করি।
পরে ভর্তির নিয়ম কানুন মেনে কর্তৃপক্ষ আমাকে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট পড়ার সুযযোগ দেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের প্রফেশনাল আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণের প্যাকেজ নং ৯, লট নং-৫ কোর্চ পরিচালক মিল্টন স্যারে ব্যাচে সাতক্ষীরা ডবলুডি-৪২৯ নং কোর্চে ভর্তি হয়।

প্রথম দিকে কষ্ট মনে হলেও রাত দিন প্রাকটিস করতে থাকি। এক পর্যায়ে এলইডিপি সাতক্ষীরা ডবলুডি -৪২৯ কোর্সের পরিচালক এএইস মিল্টন মন্ডল স্যার সুচারু ভাবে সহজ পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে ওয়েভ ডিজাইন ও ডেভোলপের কাজ বুঝাতে থাকে। এক পর্যায়ে সহজে স্যারে পাঠদান বুঝতে শিক্ষি। মাত্র তিনটি ক্লাসেই পুরা এইসটিএমএল ভাষা শিক্ষে যায়। চতুর্থ দিনে আমি বিভিন্ন পত্রিকার লিংক দিয়ে একটি ওয়েভ পেজ তৈরি করি। এরপর সিএসএস,পিএসডি,বুসট্রাপ,জেকুয়েরি,সিএমএস,ওয়ার্ডপ্রেস,প্রিমিয়ার থিম সহ সংশ্লিষ্ট দিয়ে ওয়েভ ডিজাইন করতে শিক্ষি। ব্যাচের কয়েক জনের সমন্বয়ে আমরা একটা গ্রুপ তৈরি করি। এখন অল্প সময়ে ইচ্ছেমত ওয়েভ সাইট তৈরি করতে পারি।

কোর্চ চলাকালিন সময়ে আমি লোকাল মার্কেট প্লেস থেকে কাজ পেতে থাকি। একে একে ১০-১২টি কাজ পায়। এসব কাজ মেষ কওে প্রায় দুই লক্ষ ও একচল্লিশ হাজার টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হয়। এখনো হাতে কয়েকটি কাজ আছে। এছাড়া মাসিক চুক্তিতে দুইটা অনলাইন নিউজ পের্টালে কাজ পেয়েছি। এসব কাজে আমাদের ব্যাচে অনেকের সহযোগীতা নিয়েছি। এধরণের একটি কোর্চ করতে পেরে আমি নিজেকে ধোন্য মনে করছি। এছাড়া দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকদের বেশি বেশি প্রশিক্ষণের আওয়তায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।

একটি মানসম্মত সরকারি ট্রেনিং পোগ্রাম দূর থেকে সমালোচনা না করে, সামনে গিয়েই সময় দিয়েছি। সরকার চেয়েছে ২০০ঘন্টার ট্রেনিং হোক কিন্তু সফল এবং ১০০% সফল একটি ট্রেনিং পোগ্রাম হোক। তাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেভাবেই হোক এ কোর্সে যারা ট্রেনিং নিচ্ছে তাদের মধ্যে যাতে ১০০% ইনকাম সোর্সে নিয়ে যাওয়া যায়। সেরকম একটি পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ পাই কোর্চ পরিচালক হতে যা ছিল বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা।

আমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, এসএম মোস্তফা কামাল, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপুক্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্য দেশরতন শেখ হাসিনাকে ধোন্যবাদ জানায়। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ঐকান্তিক আন্তরিকতা এধরণের প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি স্বচ্ছল হতে পেরে। মুজিববর্ষে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্টের মাধ্যমে দেশের সকল যুবক-যুবতি বেকারত্বের গ্লানি মুছে ফিরে পাক স্বচ্ছল এমন শুভ কামনা রইল।

আবু সাইদ বিশ্বাস
প্যাকেজ নং ০৯,লট নং-০৫ ব্যাচ নং- সাতক্ষীরা- ডবলুডি-৪২৯
রেজি নং ২৭৭৮১১ মোবাইল নং ০১৭১২৩৩৩২৯৯

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।