সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ঝিটকি গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির স্কুল ছাত্র হৃদয় ম-লকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার দুপুরে আদালতে পাঠিয়েছে। তারা হৃদয় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মারিফা খাতুন (৪০), তার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সুকুমার ম-লের ছেলে সৌমিক ম-ল (৯)।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ে এসে চাচাত ভাই সহপাঠী সৌমিক ম-লকে সঙ্গে নিয়ে একই গ্রাম ঝিটকির ইসমাইল গাজীর বাড়িতে যায় বিকাশ ম-লের ছেলে ঝিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হৃদয় ম-ল। কিছুক্ষণ পর দু’টি পেরেক নিয়ে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় প্রসেনজিতের কাছে পড়তে যায় সৌমিক। সৌমিকের কাছে বিকাশ ম-ল জানতে চাওয়ায় হৃদয় মাসুদ রানার বাড়িতে রয়েছে জানালে সেখানে খোঁজ করেও হৃদয়ের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। একপর্যায়ে স্থানীয় মন্দির ও মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে শামুক কুড়াতে যেয়ে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে হৃদয়ের লাশ দেখতে পায় বলে প্রচার দেয় ইসমাইলের স্ত্রী মারিফা। ওইদিন সকাল ১১টায় লাশ উদ্ধারের পরপর ইসমাইল হোসেন, তার স্ত্রী মারিফা, তাদের ছেলে শিশু আল আমিন, শিশু মাসুদ রানা, কওছার আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন ও আব্দুর রশিদের ভাড়াটিয়া আশাশুনির আব্দুল জলিলের ছেলে আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। মাসুদ রানার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ওইদিন রাত ৯টার দিকে পুলিশ সুকুমার ম-লের ছেলে সৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসে। শনিবার বিকেলে আব্দুর রশিদের ভাড়াটিয়া আল আমিনকে মুক্তি দেয় পুলিশ। একই সময়ে মারিফা ও তার দু’ছেলেকে আসামী করে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয় পুলিশ। সৌমিককে আটক রেখে তার স্বজনদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বলেন সদর থানার সেকে- অফিসার হাবিবুর রহমান। এরপর পুলিশ সৌমিককে এবং মাসুদ রানা ও তার মা মারিফাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুমনা শারমিনের সহায়তায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রোববার সৌমিককে প্রধান আসামী করে মাসুদ রানা ও তার মা মারিফাকে যথাক্রমে ২ ও ৩নং আসামী করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে বিকাশ ম-ল জানান, শুক্রবার হৃদয়ের লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে বিকেল ৫টার দিকে বাড়িতে পাঠানো হয়।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় বলেন, কিশোর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত দু’হাজার টাকার বন্ডে মাসুদ রানা ও সৌমিককে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। তাদেরকে বাবা ও মাসহ আইনজীবী এবং সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারের জামিনদার চাওয়া হয়েছে। অপরদিকে সৌমিক বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলাম, মাসুদ রানা বিচারিক হাকিম রাজীব রায় ও মারিফা খাতুন বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ও লাশ সম্পর্কে তথ্য গোপন করার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি শেষে দু’শিশু তাদের বাড়িতে ও মারিফাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সৌমিক ও মাসুদ রানার জবানবন্দি অনুযায়ি তারা তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই।