ইউরোপিয়ান ও অন্যদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নতুন অবরোধে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অবরোধে ইরানের অর্থনীতি চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, তার ওপর বৃহস্পতিবার কার্যত ইরানের সমস্ত ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ইরানের ১৮টি ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এর ফলে ইরানকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় দেশগুলো ও অন্যদের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি ও আরব নিউজ। এর আগে ইরানের এই ১৮টি ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের আওতায় ছিল না। নতুন করে তাকে কালোতালিকাভুক্ত করার ফলে এখন তাদের সঙ্গে বাইরের কেউ কাজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আর্থিক খাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে ইরানকে। অবরোধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বলেছেন, এই অবরোধ ইরানের আর্থিক খাত ও ১৮টি বড় ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
ইরান যতক্ষণ পর্যন্ত তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সমর্থন দেয়া এবং নিজের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেছেন, ইরানের ক্ষতিকর কর্মকান্ডে সরকারকে অর্থায়নে বড় রকম একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এই খাত। খবরে আরো বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব একশন নামে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার অধীনে ইরান কিছুটা সুবিধা বা ছাড় পেয়েছিল। কিন্তু সেই সুবিধাকে বন্ধ করে দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অবরোধ আরোপ করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন অবরোধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রস্তাবের পক্ষে ছিল না চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ। তা সত্ত্বেও ইরানের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ১৬টি দেশের আর্থিক খাতে বড় ভূমিকা রাখে। একটি ব্যাংকের মালিক অথবা নিয়ন্ত্রক ইরানের আরেকটি ব্যাংক এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য একটি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের কয়েকটি এর আগের টার্গেটে ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে অবরোধ দেয়া হয়েছে তাতে পুরো আর্থিক খাত অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে আমিন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ব্যাংক কেশাবারজি ইরান, ব্যাংক মাসকান, ব্যাংক রেফাহ কারগারান, ব্যাংক-ই শাহর, এহতেসাদ নোভিন ব্যাংক, ঘারজোলহাসানেহ রেসালাত ব্যাংক, হেকমত ইরানিয়ান ব্যাংক, ইরান জামিন ব্যাংক, কারাফারিন ব্যাংক, খাভারমিয়ানেহ ব্যাংক, মেহর ইরান ক্রেডিট ইউনিয়ন ব্যাংক, পাসারগাদ ব্যাংক, সামান ব্যাংক, সারমায়েহ ব্যাংক, তোসি তাভোন ব্যাংক, ট্যুারিজম ব্যাংক এবং ইসলামিক রিজিয়নাল কো-অপারেশন ব্যাংক। বিদেশি যেসব কোম্পানি এসব ব্যাংকের সঙ্গে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে তাদেরকে ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এর মধ্যে এসব ব্যাংকের সঙ্গে কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে।
মার্কিন এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে ইউরোপীয়ান দেশগুলো। কারণ, তারা তাদের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ও অন্য কোম্পানিগুলো খোলা রাখবে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে। আগে এমনটা অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে অবরোধের জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, বিশ্ব যখন সঙ্কটের মুখে পড়েছে তখন এমন অবরোধ হলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের নাগরিকদের কাছে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দেয়ার সব চ্যানেল বন্ধ করে দিতে চায় মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু এই সর্বশেষ নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ইরানিরা বেঁচে থাকবে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে একটি জনগোষ্ঠীকে অনাহারে রাখা হলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যেসব অপরাধী আমাদের অর্থনীতিকে ব্লক করে দিয়েছে তারা বিচারের মুখোমুখি হবে।