কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি ॥ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে চার খুনের ঘটনার পর থেকে নিহতদের বাড়িতে এখনও কৌতুহলী মানুষের ভিড় কমেনি। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের পাশে ওই বাড়িসহ পাড়াজুড়ে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। এদিকে সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশ নিহত শহিনুনের আপন সহোদর ভাই রায়হানুলকে শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে বিকেলে আদালতে পাঠিয়েছেন। এছাড়া শুক্রবার বিকালে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আটককৃত আব্দুর রাজ্জাক ও আসাদুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতের স্বজনদের চোখে মুখে আতঙ্ক। তবে ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ৫ মাসের শিশু মারিয়া সুলতানা বর্তমানে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রয়েছে। এদিকে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার ভোরে নিহত শাহিনুর, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহি ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মেয়ে তাসনিম সুলতানার লাশ উপজেলার ব্রজবক্স গ্রামে নিহত শাহিনুরের মামা আবদুল কাদেরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সিআইডি অফিস সুত্রে জানা গেছে, পুলিশের নজরবন্দীতে থাকা নিহত শাহিনুরের ভাই রায়হানুলকে শুক্রবার গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে জিজ্ঞাসাবদের জন্য আটককৃত খলিসা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ও নিহত শাহীনুর রহমানের মাছের হ্যাচারির কর্মচারি উপজেলার ধানঘোরা গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে আসাদুলকে শুক্রবার বিকেলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে একই পরিবারের রোমহর্ষক এই হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে কারো নাম উল্লেখ না করে কলারোয়া থানায় মামলা (নং-১৪) করেছেন শাহিনুরের শাশুড়ি উপজেলার ওফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজির স্ত্রী ময়না খাতুন। অপরদিকে নিহতের মা আয়েশা খাতুন, বোন আছিয়া, ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফাহিমা বলেন, প্রতিবেশি আকবর আলীর সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে। তারা বিভিন্ন সময়ে শাহীনুর ও রায়হানুলকে হুমকি দিত। আকবরকে না ধরে পুলিশ রায়হানুলকে গ্রেফতার করেছে। রায়হানুলের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফাহিমা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ তাকে বাপের বাড়ি থেকে ডেকে কলারোয়া থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১২টার পর বাসায় রেখে যায়। এ সময় রায়হানুলের হাতে একটি কাটা দাগ নিয়ে প্রশ্ন করে। কলারোয়া থানার ওসি (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল বলেন, চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার মামলাটির তদন্তভার সিআইডি’র হাতে গেলেও তাদেরকে তদন্তে সহযোগিতা করতে পুলিশ কাজ করছে। গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা সিইআডি’তে। আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। সাতক্ষীরার সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান বলেন, শুক্রবার সিআইডি কলারোয়ার ফোর মার্ডার মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে নিহত শাহিনুনের ভাই রায়হানুলকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করা যাবে না। এর আগে বৃহস্পতিবার রায়হানুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভোরে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউপির খলিসা গ্রামের মাছের ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর ও তার স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তবে, ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের ৫ মাস বয়সী শিশু কন্যা মারিয়া।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …