আলু শূন্য সাতক্ষীরার বাজার: চরম বিপাকে নিন্ম আয়ের মানুষ: ২৩ লক্ষ মানুষ অসহায় আলু সিন্ডিকেটের কাছে

আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবাতা রিপোট:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা হঠাৎ সাতক্ষীরার বাজার থেকে আলু উধাও। সরকারের বেধে দেয়া দামের কারণেই সাতক্ষীরার আলুর বাজার আলু শূন্য হয়ে পড়েছে। যা পাওয়া যাচ্ছে তা আবার সরকার নির্ধাারিত মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ২০ টাকা বেশি। ফলে আলু কোল্ড স্টোরে মালিক,আড়তদার,পাইকারী ও ক্ষুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে জেলার ২৩ লক্ষ মানুষ। আড়ৎদাররা বলছে আমদানী নেই, খুচড়া বিক্রেতারা বলছে সরকারী নির্দেশ্যে আলুর মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পর থেকেই সাতক্ষীরা আলু শূন্য হয়ে পড়েছে বাজারগুলো। হিমাগার থেকে নির্ধারিত দামে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড় বাজার ঘুরে আলু শূন্যের দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ৭ অক্টোবর আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে কেজিপ্রতি ২৩ টাকা, পাইকারি বাজারে ২৫ টাকা ও খুচরা বাজারে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এর আগে সাতক্ষীরার বাজারে আলুর কেজি প্রতি দর ৪৫ টাকায় ওঠে, যা এ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আলুর দর কেজিপ্রতি ৭ টাকা কমেছে। কিন্তু নির্ধারিত দর কার্যকর হয়নি।
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক আলুর চাহিদা ১৮০ গ্রাম থেকে ২শ গ্রাম ধরা হয়। সেই হিসেবে প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলাতে আলুর চাহিদা ৪শ মেঃটন। এক মাসে ১২ হাজার মেঃটন হলে বছরে তা দাড়ায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেঃটন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় জেলাতে চলতি বছরে আলুর উৎপাদন হয়েে ৭০ হাজার ৮৫৩ মেঃটন। সেই হিসেবে এবছর এ জেলাতে আলুর ঘাটতি রয়েছে ২লক্ষ ৮৯ হাজার ১৪৭ মেঃটন।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে একজন চাষির প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। এক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রয় মূল্যের ওপর ২-৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে তারা এই তিন পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করেছেন।
কৃষি বিপণন অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় ১ দশমিক ৯ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু হতে প্রায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে।
জেলার আলুর আড়তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী, বগুড়া ও মুন্সিগঞ্জে হিমাগার থেকে সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। ২৫ টাকার জায়গায় আলু কিনতে হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে।
মঙ্গলবার দুপুর দুইটার সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের আলুর আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আড়তে আলু নেই বললেই চলে। বিক্রেতারা অলস বসে আছেন। পাইকারি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম ‘২৫ টাকা দামে আলু বিক্রি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ কেজি প্রতি আলু আমাদের কিনতে হয় ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়। লোকসান দিয়ে তো ব্যবসা করা যায় না। (সোমবার) থেকে সাতক্ষীরার বাজারে আলু বিক্রি বন্ধ আছে।’
সুলতান পুর বড় বাজার আড়তদার শেখ শাহবুদ্দিন বলেন, সরকারী ঘোষণা মোতাবেক আলুর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩০ টাকা। কিন্তু আড়ৎ থেকে কিনে বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ হয় ৪৩.৫০ টাকা। তাহলে এই আলু বিক্রি করা আমাদের অসম্বব। শুধু তাই নয়, বেশি দামে আলু বিক্রি করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করছে। তিনি আরো জানান, গত ১২ অক্টোবর তিনি ১১০ বস্তা আলু ২,৮৭,১০০ টায় ক্রয় করেণ। গত কয়েক দিন ধরে সেই আলু৩৮ টাকা কেজি দরে বাকিতে বিক্রয় করেন। এতে তার লোকশান হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৬০ টাকা। যে কারণে সোমবার থেকে তিনি আলু বিক্রয় বন্ধ করে দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সুলতান পুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাদশা জানান, সরকারের বেধে দেয়া মূল্যে তারা আলু ক্রয় করতে পারছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা আলু ক্রয় বিক্রয় করা বন্ধ করে দিয়েছে।
সাতক্ষীরা খামার বাড়ির কৃষি উপপরিচালক নূরুল ইসলাম জানান,ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের মনিটরিং জোরদার করা উচিত। পাশাপাশি আলুর দাম বাড়ার কারণ খুজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তবে আশার কথা হলো শীত আসার সাথে সাথে নতুন আলু বাজারে উঠতে শুরু করবে। তখন দাম কমবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।