ক্রাইমবাতা রিপোট: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের দুটি মামলায় গ্রেফতার দৈনিক সংগ্রামের প্রধান প্রতিবেদক এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ওয়ারেন্টমূলে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানায় পুলিশ। অপরদিকে তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে ওয়ারেন্টমূলে রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের ওই দুটি মামলায় বিচার চলছে। ওই দুই মামলায়ই ওয়ারেন্ট জারি হয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) এ সভাপতির বিরুদ্ধে।
২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়। তখন কাদের মোল্লাকে ‘কসাই কাদের’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের বার্ষিকীতে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদৎবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
যুদ্ধাপরাধীকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরের দিন ১৩ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় আফজাল হোসেন নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, প্রধান প্রতিবেদক রুহুল আমিন গাজী এবং বার্তা সম্পাদক সাদাত হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তির আল্টিমেটাম
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব চত্ত্বরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ আল্টিমেটাম দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, রুহুল আমিন গাজীকে গতকাল (বুধবার) গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা জানি হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিনে আছেন এবং নিম্ন আদালতে সেটা কনফার্ম করেছেন। কিন্তু সেই মামলার হাজিরার দোহাই দিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আশ্চর্য হয়ে যাই একজন সাংবাদিক নেতাকে বিনা নোটিশে, তাকে না জানিয়ে এভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরো বলেন,সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য মিথ্যা মামলায় যাদের আটক করে রাখা হয়েছে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। এবং আজকের মধ্যে রুহুল আমিন গাজীকে যদি মুক্তি দেয়া না হয় তাহলে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ ঘরে বসে থাকবেন না, রাজপথে নেমে আসবে। এবং এই আন্দোলন একসময় গণমুক্তির আন্দোলনে রূপ নিবে।
এ সময় তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব সহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা এই প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে জানিয়ে দেই এবং ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তাকেও জানিয়ে দেই, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন মেনে নেয়া হবে না।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন,আজকের মধ্যে যদি সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দেয়া না হয়, তাহলে লাগাতার কর্মসূচি করা হবে এবং রুহুল আমিন গাজীসহ সব সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিতে ডিইউজের উদ্যোগে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত ও রাশেদুল হক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি একেএম মহসীন প্রমুখ