সাতক্ষীরায় আউশ চাষে বিপ্লব ঘটালো কৃষকরা # কৃষি প্রণোদনায় উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ # অ্যাগ্রো প্রসেসিং সেন্টার করার দাবী কৃষকদের

আবু সাইদ বিশ্বাস:  ক্রাইমবাতা রিপোট:  সাতক্ষীরা : প্রণোদনা দেয়ায় সাতক্ষীরায় কৃষিতে আউশের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে। এবছর ধানের দামও ভাল পেয়েছে চাষীরা। করোনা মহামারির বিপর্যয়ের মধ্যেও বোরো ও আমনের আবাদের মধ্যবর্তী সময়টাতে আউশ চাষ করে এবার বিপ্লব ঘটিয়েছে সাতক্ষীরা অঞ্চলের কৃষক। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি জমিতে আবাদ হয়েছে আউশের । হেক্টর প্রতি হাই্ব্রীডের ফলন পেয়েছ ৩.২০ মে:টন। এতে ২৩ হাজার মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদন হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি বিভাগ। বেশির ভাগ এলাকাতে আউশ ধান ঘরে তুলেছে কৃষকরা। বস্তা প্রতি ধান ১৬ থেকে ১৭শ টাকা পেয়ে খুশি আউশ চাষীরা। এক সময়ে যে সব জমি চাষাবাদের আওয়তায় আনা যেতনা সরকার সেসব জমিতে আউশ চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা দিতে থাকে। ফালে কয়েক বছরের মধ্যে জেলাতে আউশের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়ে যায়। আউশ চাষে উদ্বৃদ্ধ করতে চলতি মৌসুমে জেলাতে ২ হাজার কৃষককে ১৭ লক্ষ টাকার কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর, কলারোয়ায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৪০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৩৬৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১২৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলাতে ২৩৫ হেক্টর।
চলতি মৌসুমে জেলাতে ২৩ হাজার ১০ মে.টন আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রি নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদরে ৯৯৮৬ মে.টন, কলারোয়ায় ৬৪৮৬ মে.টন, তালায় ৩৪৮৫ মে.টন, দেবহাটায় ৯৯৫ মে.টন, কালিগঞ্জে ১০৩৫ মে.টন, আশাশুনিতে ৩৫৬ মে.টন ও শ্যামনগরে ৬৬৭ মে.টন ধান উৎপাদন হয়।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন কয়েক বছরে আউশের আবাদ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কারণ আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার আপলিফট করা লাগছে না। সুতরাং বোরোর তুলনায় আউশের উৎপাদন খরচ অনেক কম। তবে কৃষকরা বলছেন মজুদদারি সিন্ডিকেট ভেঙে সরকার নিজস্ব প্রভাব বলয় গড়ে তুলতে না পারলে এই সাফল্য কৃষকের উপকারে আসবে না। আউশের সংযুক্তিতে ধানের দুই ফসলি জমিগুলো তিন ফসলিতে উন্নীত হওয়ায় বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের ফসল-বিন্যাস।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে দুই হাজার আউশ চাষিকে জনপ্রতি ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও এমওপি ১০ কেজি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫৫০ জন , কলারোয়ায় ৪৮০ জন, তালায় ৪৫০ জন, দেবহাটায় ১৩৯ জন, কালিগঞ্জে ১৫০ জন, আশাশুনিতে ১১০ জন ও শ্যামনগর উপজেলাতে ১৩০ জন চাষীকে প্রণোদনা দেয়া হয়।

কৃষকেরা জানান, বোরোর তুলনায় আউশ চাষে খরচ অনেক কম। জমি চাষ, রোপণ, সেচ, সার ও কীটনাশক বাবদ বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে প্রান্তিক কৃৃষকরাও আউশ চাষে ঝুঁকছেন। তবে সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কৃষক। তাদের দাবি যারা আউশ চাষ করেনি এমন লোকও সরকারি বীজ, সার ও নগদ টাকা পেয়েছে।

উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা জেলায় ক্রমাগত আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ বছরে আউশ আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১০-১১ সালে জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমিতে, চলতি বছর ২০২০-২১ সালে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে।
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া গ্রামের ভ্যানচালক মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ফিরোজা বেগম। তিনি চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা পেয়ে ৫ বিঘা জমিতে আউশ চাষ করে। ফলন ও দাম দুটই ভাল পেয়েছে। তিনি বলেন এতে তার খরচ বাদে ভাল টাকা লাভ লাকবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পারকুখরালী গ্রামের আদর্শ কৃষক মো. মতিয়ার রহমান চলতি মৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে হাইব্রিডশক্তি-২ ও জামাইবাবু জাতের আউশ ধান চাষ করেছেন। উৎপাদনও ভাল হয়েছে। সরকারী সহযোগীতা পেলে তার এলাকাতে আউশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।

বুধহাটা অঞ্চলের কৃষি উপসহকারী কৃষিকর্মকতা জাহিদুল ইসলাম জানান,গত কয়েক বছরে আশাশুনিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আউশের আবাদ। এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় আউশের বাড়তি আবাদ করেছেন কৃষকেরা। আউশের বাম্পার ফলন ও পেয়েছে চাষিরা। তিনি আরো জানান সরকারের দেয়া কৃষি প্রণোদনার কারণে চাষীরা আউশ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

চাষীদের অভিযোগ প্রতি বছর আউশ ধান ঘরে তুলতে তাদের ব্যাপক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। পানির মধ্য থেকে আউশ ধান কাটতে হয়। এতে খরচ হয় দ্বিগুণ।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বীজ, সার, সেচসহ কৃষি উপকরণে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ায় জেলায় আউশের আবাদ বেড়েছে। সেই সাথে কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন করেছে, যেগুলো চাষের ফলে গড় ফলনও বেড়েছে । তিনি বলেন ‘আজকের ক্রপ কাটিং দেখা যাচ্ছে প্রতি বিঘা জমিতে এখন ১৮-১৯ মণ ধান হচ্ছে। অথচ এক সময় আউশ উৎপাদন বিঘা প্রতি ছিল মাত্র ২-৩ মণের মতো।’

এদেশের কৃষিপণ্যকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের বাজারে রপ্তানি করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব । সেজন্য অ্যাগ্রো প্রসেসিং সেন্টার করার দাবী সংশ্লিষ্টদের। যাতে করে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী দেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি করা যায়।
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ২৪/১০/২০২০
০১৭১২৩৩৩২৯৯

 

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।