যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে সেবা ৫০ শয্যা হাসপাতালে ৭০ পদ শূন্য

চৌগাছা (যশোর)  প্রতিনিধি:

যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। যা আছে তার মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৭০ পদই শূন্য। তাতে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্স। ২০২ জনের মঞ্জুরি পদের বিপরীতে জনবল আছে মাত্র ১৩১ জন। এদের মধ্যে ডাক্তার ১৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী তিনজন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৩৯ জন ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ১৪ জনের পদে লোক নেই।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, হাসপাতালে অ্যানেসথেসিস্ট, কনসালট্যান্ট সার্জারি, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিও, কনসালট্যান্ট চক্ষু, ইএনটি, জুনিয়ার কনসালট্যান্ট চর্ম ও যৌন, ইএমও, সহকারী সার্জন, প্যাথলজিস্ট পদে কোনো চিকিৎসক নেই। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের পদটিও খালি পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সেবার মান ধরে রাখা তো দূরের কথা নিয়মিত সেবাও দেয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ বোগীসহ প্রসূতি মায়েদের লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ওষুধ কাউন্টারে জনবল কম থাকায় সেখানেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বৃদ্ধ, শিশু ও প্রসূতি মায়েদের। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার মা, শিশু ও সাধারণ সেবা গ্রহীতারা। কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, ঝিকরগাছা, কালিগঞ্জ, শার্শা ও যশোর সদর উপজেলার প্রসূতি মা, শিশুসহ সাধারণ রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।
উপজেলার পাশাপোল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডা: সামিনা জেবিনের পদায়ন দেখালেও তিনি কোনো দিন কর্মস্থলে আসেননি। ফুলসারা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডা: হাদিউর রহমানকে পদায়ন দেখালেও তিনিও কর্মস্থলে আসেন না বলে জানা গেছে। একইভাবে পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে একজন মেডিক্যাল অফিসারকে পদায়ন দেখালেও তিনি ২০১৪ সাল থেকে কোনো দিন কর্মস্থলে আসেননি।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার ছোটকুলি গ্রামের মিনিয়ারা বেগম বলেন, সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসেছি। টিকিট নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ১১টার দিকে টিকিট পেয়েছি। ডাক্তারের সামনে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম ১২.৩০ পর্যন্ত। এখন ১২টা ৪৫ বাজে ওষুধ নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। শরীর খুব খারাপ আর দাঁড়াতে পারছি না।
সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা মডেল হাসপাতালটি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় পরপর ১২ বার সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু জনবল না থাকায় যথাযথ সেবা দেয়া হাসপাতালটির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডাক্তার ও মাঠকর্মী না থাকায় গ্রাম এলাকার মা ও শিশুসহ সব ধরনের রোগীরাও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করলেও ডাক্তার, স্বাস্থ্যসহকারী ও মাঠকর্মী না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না।
উপজেলা মডেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, হাসপাতালের শূন্য পদের জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদন করেছি। জনবলের তুলনায় রোগী অনেক বেশি, তাই একজন ডাক্তারকে আউটডোরে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। ইনডোরে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ রোগী ভর্তি থাকে। বিশেষ করে যে বিভাগটির জন্য আমরা মডেল হয়েছি সেই প্রসূতি বিভাগে অ্যানেসথেসিস্ট কোনো ডাক্তার নেই। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ পদে ডাক্তার ও কর্মচারী সঙ্কটের ফলে সেবার মান ধরে রাখতে দারুণভাবে হিশশিম খেতে হচ্ছে। যে তিনজন চিকিৎসক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে আসেন না তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, একজন যশোর ২৫০ শয্যায়, একজন কেশবপুর ও অন্যজন দেশের বাইরে আছেন।

Check Also

গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।