ক্রাইমবাতা ডেস্ক: সব আলোচনাকে ছাপিয়ে খবরের শিরোনামে এখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলামবিরোধী মনোভাব। মুসলমানদের কটাক্ষ করে নেতিবাচক মন্তব্য আর পদক্ষেপে রীতিমতো খলনায়ক বনে গেছেন তিনি।
গত ১৬ অক্টোবর ফ্রান্সের একটি সড়কে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা করেছিল এক তরুণ। কারণ, ওই শিক্ষক ক্লাসে মহানবীর কার্টুন দেখিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তখনই শিক্ষকের ওপর হামলাকারী আবদৌলখ নামের ওই তরুণ ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
এরপরই ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না বলে সাফ জানান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি বিশ্বনবীকে নিয়ে একটি বিতর্কিত কার্টুন দেখানোর জেরে খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁ এ কথা বলেন। ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
ধর্ম নিয়ে কটূক্তিতে বিশ্বের অবস্থান :
ইসলামের বিরুদ্ধে ফরাসি সরকারের নেতিবাচক পদক্ষেপ বা অবস্থানে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে ছাড় দিয়ে কথা বলছে না পশ্চিমা দেশগুলোও।
তুরস্ক:
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ম্যাক্রোঁর বক্তেব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। কট্টরপন্থি ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা ম্যাক্রোঁর ‘মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করানো প্রয়োজন মনে করেন এরদোগান। এমনকি ফরাসি পণ্য বয়কটেরও ডাক দিয়েছে আঙ্কারা।
পাকিস্তান:
এরদোগানের পথে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সমালোচনা ব্যস্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইমরান বলেন, একজন নেতার প্রধান বৈশিষ্ট হলো জাতিকে একত্র করা। তা না করে ম্যাক্রোঁ জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন। সংকটকালে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন।
‘নবী মুহাম্মদের (স.) অবমাননাকর কার্টুন প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলমানদের ইচ্ছাকৃতভাবে উসকানি দিচ্ছেন ম্যাক্রোঁ। একইভাবে উসকে দিচ্ছেন তার জনগণকেও, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ বলেন ইমরান খান। এ ছাড়া ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইসলামাবাদ।
এদিকে কঠোর প্রতিবাদ আর নিন্দা জানিয়েছে কাতার, ফিলিস্তিন, মিসর, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ।
কাতার:
দেশটির দোকানপাট থেকে ফরাসি পণ্য সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে সব ধরনের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায় কাতার। বিভিন্ন শহরের পথে পথে লাগানো হয়েছে ফরাসি পণ্যবিরোধী পোস্টার।
কুয়েত:
ম্যাক্রোঁ মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করায় কুয়েতেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ফরাসি প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে চূড়ান্ত দায়িত্বহীন আখ্যা দিয়েছে ‘গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিল’।
ধর্ম নিয়ে ম্যাক্রোঁর নানা ধরনের উপহাস এবং আক্রমণাত্মক মন্তব্যে ক্ষোভ জানিয়েছে পশ্চিমাদেশগুলোর নাগরিকরা।
আয়ারল্যান্ড:
ফরাসি প্রেসিডেন্টের ইসলাম নিয়ে বিরুপ কর্মকাণ্ডে আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত অধিকাংশ মুসলমানরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে- ইসলাম, প্রিয় নবী নিয়ে এসব ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদ করেন। শান্তির এই ধর্ম নিয়ে অশুভশক্তির এই ব্যঙ্গাত্মক প্রচারণা ভাবিয়ে তুলছে এখানকার মুসলমানদেরও। একই সঙ্গে ধর্ম নিয়ে কটু মন্তব্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইরিশরা।
ডেনমার্ক:
দেশটিতে বসবাসরত মুসলামানরা ম্যাক্রোঁবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অনেকে। যদিও দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
পর্তুগাল:
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ইসলাম ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে পতুর্গালে থাকা মুসলমানরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এ ছাড়া সাধরণ পর্তুগিজ নাগরিকরা বলছেন, কারও ধর্ম নিয়ে এমন নেতিবাচক কাজ করা তার মোটেও উচিত হয়নি। ইউরোপে ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখতে দ্রুত ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সমাধানের আহ্বান তাদের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এমন কঠোর অবস্থানের পরও ফ্রান্স কখনো ইসলামি মৌলবাদীদের কাছে নতস্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রোববার (২৫ অক্টোবর) এক টুইটবার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে দিনে দিনে ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা তলানিতে নেমে এসেছে দেশটির নাগরিকদের কাছে। বিভিন্ন কারণে ক্ষোভের দানা বাধছে ফরাসিদের। ‘ইয়েলো ভেস্ট‘ আন্দোলনসহ সম্প্রতি তার ধর্মবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে তা অনেকটা ফুটে উঠেছে।