নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার মূলহোতা দেলোয়ায়কে একটি হত্যা মামলায় তিন দিনের ও নির্যাতন মামলার আসামি ইসরাফিলকে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
বুধবার দুপুরে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাসফিকুল হক দুই আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে সকালে দুই আসামিকে জেলা কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান হত্যা মামলায় পুলিশ দেলোয়ারের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ৪ নং আসামি ইসরাফিলকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে শুনানি শেষে হাসান হত্যা মামলায় দেলোয়ারের তিন দিন এবং নারী নির্যাতন মামলায় ইসরাফিলের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে, ২১ অক্টোবর নারী নির্যাতনের ঘটনার পর থেকে পালিয়ে থাকা ইসরাফিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক মাসফিকুল হক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বর্তমানে দেলোয়ার সাতটি মামলায় ও ইসরাফিল দুই মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন। ওই ঘটনায় তিনটি মামলায় ১২ জন আসামি জেলা কারাগারে রয়েছে। এর মধ্যে আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার ওই নারীর স্বামীর সাথে দীর্ঘ দিন ধরে মনোমালিন্য ছিলো। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ও ছেলে একলাশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার একাকিত্বের সুযোগে স্থানীয় বাদল ও দেলোয়ারের নেতৃত্বে এলাকার, রহিম, কালাম, ইসরাফিল ও তাদের সহযোগীরা ওই নারীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে শ্বশুরবাড়িতে আসেন ওই গৃহবধূর স্বামী। তারা ঘরে অবস্থান করার সময় অভিযুক্তরা স্বামীসহ ওই গৃহবধূকে আটক করে ব্যাপক নির্যাতন চালান। তারা ওই নারীর স্বামীকে বেঁধে রেখে অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেন। এ সময় তারা নির্যাতনের নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন ওই গৃহবধূর। তার পর থেকে পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করেন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে নির্যাতিতাকে বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য করেন। নির্যাতিতার কাছ থেকে টাকা দাবি করলে টাকা না দেয়ায় ফেসবুকে নগ্ন ছবি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন নির্যাতনকারীরা।
পরে ওই ঘটনার ৩২ দিন পর ৪ অক্টোবর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবস্ত্র নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে সর্বত্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বেগমগঞ্জ থানায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ইসরাফিল ৪ নং আসামি।