রংপুরের জুয়েলকে পিটিয়ে পুড়িয়ে মারার রহশ্য কি? যে অভিযোগে হত্যা করা হয়েছে তা মানতে রাজি নয় স্বজনরা

রংপুর মহানগরীর পূর্ব শালবন এলাকার নবী ভিলা। মৃত আব্দুল ওযাজেদের এই বাড়িটি এক নামেই পরিচিত এলাকায়। তারই ছেলে শহিদুন্নবী জুয়েল একবছর ধরে মানসিক ভারসম্যহীন। তাকেই লালমনিরহাটের বুড়িমারিতে পিটিয়ে হত্যার পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

জুয়েলের বোন শিল্পী ও লিপিসহ এ ঘটনায় হতবাক স্বজন ও এলাকাবাসী। কেউ মানতে পারছেন না জুয়েলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়ে মারা হয়েছে সেটা সঠিক। তারা বলছেন কিছুটা মানসিক ভারসম্যহীন হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াতসহ ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে সক্রিয় ছিলেন জুয়েল। ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন তারা।

বৃহস্পতিবার সকালে সুমন নামের এক বন্ধুর সাথে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন জুয়েল। বড় বোন লিপি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে জুয়েলের বউ আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তোমার ভাই আবারো সারারাত ঘুমাচ্ছে না। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বাইরে গেছে। তখন আমি জুয়েলকে ফোন দেই। তিনবার ফোন দেয়ার পর অন্য একজন ফোন ধরে বলে আমার নাম সুমন, ওর বন্ধু, জুয়েল বাথরুমে গেছে। পরে জুয়েল আমাকে ফোন করে বলে, আপা তুই চিন্তা করিস না। আমি একটা দুর্নীতি ধরেছি। ডিসির মোড়ে আছি। ডিসিকে বিষয়টি জানাবো। আমার সাথে র‌্যাবের ম্যাজিষ্ট্রেট আছে। তুই চিন্তা করিস না। তারা আমাকে প্রোটেকশন দেবে। আমাদের পরিবারকে প্রোটেকশন দিবে। তখন আমি ওকে বলি, তোর ছেলেটা অসুস্থ্য। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। ওকে ওষুধ খাওয়াবি। তখন সে বলে আমার জন্য চিন্তা করিস না, আমি আসতেছি। এই বলে ফোন কেটে দেয়। পরে বহুবার ফোন দিয়েছি কিন্তু ধরে নি। কিন্তু আমার ভাইকে যারা এভাবে মারল আমি তাদের ফাঁসি চাই।

১৯৮৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাশের পার কারমাইকেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরী এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্স থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স পাশের পর ১৯৯৬ সালে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে সহকারি লাইব্রেরীয়ান পদে যোগ দেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০১৯ সালে তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হলে তিনি মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেন।

দুইদিন আগেও ফজরের নামাজের পর হাটতে বেরিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি মিলাতে সুরা বাকারার তরজমা শুদ্ধভাবে শুনিয়ে ছিলেন। তার এমন মৃত্যর জন্য দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

৫ ভাই ৩ বোনের মধ্যে জুয়েল ছিলেন তৃতীয়। নৃশংস এই ঘটনার স্মৃতি কিভাবে মুছবেন জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আখতার, এসএএস পরীক্ষার্থী কন্যা জেবা তাসনিয়া অনন্যা এবং সপ্তম শ্রেনি পড়ুয়া পুত্র আশিকুন্নবী অরন্য।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।