যারা গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছেন পরবর্তী সরকার হিসেবে বিএনপি তাদের দায়িত্ব নিবে বলে মন্তব্য করেছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খা হলে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ‘অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: মোর্শেদ হাসান খান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি এবং জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রদানে অনীহা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পান এবং যৌক্তিক কারণেই ভাতা পান। তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহসী সৈনিক যারা শহীদ হবেন তারা কেন পাবেন না। এটা নিশ্চিত করতে হবে এবং আগামীতে যখন বিএনপি সরকার আসবে তখন এটা নিশ্চিত করবে এটা পরিষ্কার কথা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে শামসুজ্জামান দুদু আশ্বস্ত করে বলেন, ‘যে সরকার এখন আছে এই সরকারের পরের সরকারটাই হচ্ছে বিএনপি সরকার। আমি বিএনপি করি বলে বলছি না। আজকের মধ্য যদি এই সরকারের পতন হয় তাহলে পরশুদিন বিএনপি সরকার আসবে। যদি এক মাস পরেও হয় তাহলে বিএনপি সরকার আসবে। আওয়ামী লীগের এই বাস্তবতাটা বুঝতে হবে। দুই মাস পরে হলেও এরপরের সরকার বিএনপি সরকার।’
শুধু মোরশেদ খান, ওহেদুজ্জামান পুনর্বহাল হবে না মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘যারা এই সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা সবাই পুনর্বহাল হবেন। শুধু স্বপদেই না পদমর্যাদা বাড়বে। এমন হতে পারে মোরশেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পকালীন ভিসি হয়েছে। ওহেদুজ্জামানও শুধু স্বপদেই না, পদমর্যাদা বাড়িয়ে অবসরে যাবেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের যেখানে যারা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছে তাদের সবাই পুনর্বহাল হবে। কারণ তারা গণতন্ত্রের রক্ষা জন্য চাকরিচ্যুত হয়েছেন। স্বৈরতান্ত্রিক বিরোধিতা করেছেন বলেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন।’
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘যে সমাজে ভিন্ন মত পোষণ করা যায় না। সেই সমাজ হচ্ছে জলাশয়, সেই সমাজ হচ্ছে স্বৈরাতান্ত্রিক। ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে একজন ব্যক্তি যদি ভিন্নমত পোষণ করে তাহলে রাষ্ট্র তাকে রক্ষা করে এটাই আমরা জানি, এটাই গণতন্ত্র। কিন্তু এ সমাজ বদ্ধ সমাজ, অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ। এই সমাজে গণতন্ত্রের কথা যে চিন্তা করবে সে আঘাত পাবে, মামলা হবে। যারা এক লাখ মামলায় ৩৬ লাখ আসামি হয়েছে এরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরবর্তী সরকারে জাতীয় বীর হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাদেরকে বিশেষভাবে সার্টিফিকেট দেয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের পরেই তাদের সম্মান হবে।’
পুরো বাংলাদেশটাই একটা কারাগার মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এখানে কে যেন ভুল করে বললেন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পেয়েছেন। না তিনি জামিন পান নাই। তিনি কারাগারে ছিলেন, এখন তার বাসাটা কারাগার হয়েছে। আপনি যান তো তার বাসায়, দেখা করতে পারেন কিনা। বেগম খালেদা জিয়া ঈদ মোবারকের জন্য পত্রিকায় কিছু বলতে পারেন? বেগম জিয়া কি কোনো মিটিং করতে পারেন? জামিনে থাকলে আমরা যেমন মিটিং করছি তিনিও করতে পারতেন। বেগম জিয়া কারাগারে আছেন। ওই কারাগার, বাসা কারাগার আর একটা কারাগার আছে কাসিমপুরে, আর একটা আছে কেরানীগঞ্জে- আসলে পুরা দেশটাই তো এখন কারাগার।’
এই সরকার মুক্তিযুদ্ধ মানে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির অ্যাক্টিং চেয়ারপারসন তারেক রহমান রাজনৈতিক কারণেই দেশের বাইরে আছেন। তিনি এই দেশকে ভালোবাসেন। তার রাজনীতি মানবতার রাজনীতি, তার রাজনীতি স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনীতি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। সে জন্য তিনি দেশে থাকতে পারছেন না। কারণ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি এখন ক্ষমতায় আছে। এরা মুক্তিযুদ্ধ মানে না। নির্বাচন মানে না। কি লজ্জার দেখেন, পাঁচ ভাগ ভোট দিছে কিনা নির্বাচন কমিশন…….. এদের গায়ে আসলে কাপড়-চোপড় নাই। তারা হয়তো মনে করছে কাপড় আছে। আসলে কিন্তু কাপড় নাই।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভয়ের কিছু নাই। আপনি আমি বিএনপির যত ভোটার আছে সবাই যদি রাস্তায় নামি পুলিশের গাড়ি যাওয়ার জায়গা থাকবে না। বেগম জিয়া তখন পতাকা নিয়ে আবার ঘুরে আসবেন।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যদি বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন বেগম খালেদা জিয়া। এবং যদি বাংলাদেশের বালা-মুসিবত দূর করতে হয় তাহলে বেগম জিয়া সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আ ন ম এহছানুল হক মিলন। আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিয়া মো: আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ