সাতক্ষীরায় দিগন্ত জোড়া মাঠ সোনালী ধানে ভরে গেছে

আবু সাইদ বিশ্বাসঃ সাতক্ষীরা: গত ৬ বছরে উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরায় আমনের উৎপাদন বাড়লেও আবাদ হ্রাস পেয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ধানের জমিতে লোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষের কারণে কৃষি জমি হ্রাস পেয়েছে বলে চাষীরা জানান। এর পরও চলতি মৌসুমে জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দিগন্ত জোড়া মাঠ সোনালী ধান আর ধান। সাগরে নিম্নচাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোন বিপর্যয় না ঘটলে কৃৃষকদের বাড়ির আঙিনা ভরে উঠবে সোনালী ধানে। করোনায় আর্থিক সংকট কাটিয়ে আমনের ফলন ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার চাষিরা। সাতক্ষীরা, খুলনা,বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জেলা সমূহে ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে প্রযুক্তি ও চাষে যান্ত্রিকীকরণের ব্যবস্থা করতে পারলে উৎপাদন আরো বাবড়ে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
চলতি মৌসুমে জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। ২০২০-২১ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলার জন্য ৮৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৩০০ হেক্টর পরিমাণ বেশি। ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৮ টন চাল উৎপাদনের আশাবাদ কৃষি বিভাগের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায় চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সারাদেশে আমন আবাদ এরিয়া ২% বৃদ্ধি পায়।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ৮০০, তালায় ৮ হাজার ৭৫০, দেবহাটায় ৫ হাজার ৫০০, কালীগঞ্জে ১৭ হাজার ৫০০, আশাশুনিতে ৯ হাজার ৫০০ এবং শ্যামনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে।
২০২০-২১ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলার জন্য ৮৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৩০০ হেক্টর পরিমাণ বেশি। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় আমনের আবাদ হয় ৮৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে যেখানে ২০১৮-১৯ মৌসুমে একই জেলায় আমনের আবাদ হয় ৮৪ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ মৌসুমে জেলায় আমনের আবাদ হয় ৮৩ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সেখানে ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় আমনের আবাদ হয় ৮৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে এবং ২০১৫-১৬ মৌসুমে একই জেলায় আমনের আবাদ হয় ৯৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছে বর্তমানে কৃষিকে একটি লাভজনক পেশায় অনতে হবে। কৃষি বানিজ্যিকীকরণ এখন সময়ের দাবী। যেখানে যে ফসল চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া যাবে সেখানে সে ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কৃষি বিপনন ব্যবস্থায় ব্র্যান্ডিং করতে পারলে লাভের পরিমাণ বাড়বে । মিঠা পানির জমিতে লোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ বন্ধ করতে হবে।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের দাবী ন্যায্য মূল্যে কৃষিপণ্য ক্রয়ের প্রবণতা তৈরি করতে হবে। ভর্তুকি নির্ভর কৃষিকে বাজার নির্ভর ও ব্যবসাবান্ধব কৃষিতে রূপান্তর করতে হবে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের কৃষককে দুর্ভাগ্যের দুষ্টচক্র থেকে স্থায়ী ভাবে বের করে আনতে হবে। সরকারিভাবে ধান ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্বত্ব ভোগীকে নির্মূল করতে আইসিটি ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এগ্রোইকোলোজিকাল জোন বিবেচনা করে ফসল ও তার আওতাধীন জমির প্রাক্কলন করে কৃষকদের সেই মত উৎসাহ ও প্রণোদনা দিতে হবে। কৃষিকে এমন অবস্থায় আনতে হবে যেন এক ক্ষেত্রে সংকট ও অন্য ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত না থাকে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, আমনে উৎপাদন বাড়াতে এবারই সরকার প্রথম বীজে ভর্তুকি প্রদান করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় হতে বিএডিসির ১৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আমন ধানবীজ চাষিপর্যায়ে বিক্রয়ের জন্য ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছওে সারা দেশে আমন আবাদ হয়েছে প্রায় ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে। সব ঠিক থাকলে এক কোটি ৫৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।