আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সাতক্ষীরায় টিসিবির পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন। মধ্য রাত থেকে ভোরের অপেক্ষায় থাকে শতশত মানুষ। দূর থেকে আসা মানুষগুলো শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কে পাথুরে বেঞ্চের উপর চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটাতে দেখা যায়। কখন আসবে টিসিবির পণ্য বোঝাই ট্রাক। বাইরের চেয়ে একটু সাশ্রয় মূল্যে পণ্য কেনার আসায় শীত উপেক্ষা করে চাদর মুড়ি দিয়ে মাঠের মধ্যে রাত কাটানোর দৃশ্য হতবাক করেছে শহর বাসিকে। করোনা কালিন সময়ে নিন্ম আয়ের মানুষের অবস্থা এতটায় অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একই সাথে নিত্য পণ্যের আকাশ চুম্বি মূল্য সাধারণ খেটে খাওয়া হাজারো মানুষকে অসহনীয় করে তুলেছে।
এমনই প্রতীক্ষার পর যখন ট্রাক আসে তখন দল বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পড়ে টিসিবির পণ্য পাওয়ার আশায়। টিসিবির পণ্য কিনতে আসে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ সবাই। ভিড় ঠেলে আগে যেতে পারলেই মেলে পণ্য। ভিড় সামলাতে না পারলে সেদিন আর মেলে না টিসিবির পণ্য।
আগামী ভোরের অপেক্ষায় আরও একটি রাত কাটাতে হয় পাথুরে বেঞ্চের উপর। বৈরি আবহাওয়া বয়ে যায় গতরের উপর দিয়ে। মশার কামড় সহ্য করতে হয় নীরবে। করোনা ভাইরাসের ভয় ওদের মনে নেই। তাই সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব ওরা মানেনা।
শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে টিসিবির পণ্য বোঝাই ‘হাজি সাহেবের’ ট্রাক প্রবেশ করলে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা।
শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের প্রধান ফটকের সামনের বাসিন্দা সাখাওয়াতউল্যাহ বলেন, প্রতিদিন রাত ১২টার পরপরই আসতে থাকে ক্রেতারা। পার্কেও পাথুরে বেঞ্চের উপর চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমায় ক্রেতারা। ভোরের আজান হবার সাথে সাথে উঠে অপেক্ষায় থাকে টিসিবির পণ্য বোঝাই ট্রাকের। ট্রাক প্রবেশ করলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। শতশত ক্রেতা। নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব শ্রেণির ক্রেতা আসেন এখানে। গরীব, অসহায়, দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ বেশি আসেন।
আসেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরাও। এরপর এক সময় ফুরিয়ে যায় টিসিবির পণ্য। অনেকেই ফিরে যায় খালি হাতে। টিসিবির পণ্যের আশায় তাদের আরও একটি ভোরের অপেক্ষা করতে হয়।
টিসিবির পণ্য কিনতে সাত কিলোমিটার দূর থেকে আসা রইচপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাতে আসতে না পারলে টিসিবির পণ্য পাওয়া যায়না। সকাল হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ আসে। ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে পণ্য কিনতে হয়। অনেক সসময় লাইনে দাঁড়াতে হয়।
পণ্য সরবরাহ শেষ হলেও ক্রেতার লাইন শেষ হয়না। তাই রাতে এসে পার্কে শুয়ে থাকতে হয়। একই কথা বলেন, মুনজিতপুরের আমির আলী, রসুলপুরের আব্দুর রশিদ, পলাশপোলের রওশন আরা, ইটাগাছার রমেছা খাতুন, পুরাতন সাতক্ষীরার বিলকিস বেগম, কুখরালির আকরাম হোসেন, বাটকেখালির রুস্তম আলীসহ অনেকেই।
এদিকে টিসিবির ডিলাররা জানান, সাতক্ষীরায় টিসিবির পণ্য সরবরাহ করেন ৯/১০ জন। এরমধ্যে রয়েছে হাজি ট্রেডার্স, নোমান ট্রেডার্স, সাধু ট্রেডার্স, রাসেল এন্টারপ্রাইজ, আইয়ুব এন্টারপ্রাইজ, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজসহ অনেকে। শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহে ৫দিন পর্যায়ক্রমে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করেন তারা। প্রতি প্যাকেজে থাকে দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি পেঁয়াজ ও ৫কেজি সয়াবিন তেল।
প্রতি প্যাকেজের মূল্য ধরা হয় ৬৬০টাকা। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ জনের পণ্য সরবরাহ করা হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় টিসিবির পণ্য সরবরাহকারী এসব প্রতিষ্ঠানকে।
সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। টিসিবির পণ্য সরবরাহে কোন রকম অনিয়ম হলে প্রশাসন তা কঠোর হস্তে দমন করবে। ইতোমধ্যে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি সেবা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়- সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ০১৭১২৩৩৩২৯৯