নিষেধাজ্ঞা শেষে আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা

ভিযান শেষে ভালো মাছ ধরা পড়বে এ আশায় অনেকে ধারদেনা করে জাল ও নৌকা নামিয়েছে। ছবি: ইউএনবি

মা ইলিশ সংরক্ষণে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে রাজবাড়ীর জেলেরা পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে হতাশ হচ্ছেন। আশানুরূপ মাছ না পেয়ে তাদের কষ্ট বৃথা যাওয়ার মতো অবস্থা।

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট ও বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অনেক জেলে বসে আছেন। কেউ মাছ ধরতে জাল নিয়ে নেমে পড়ছেন। আবার কেউ জাল ফেলে প্রত্যাশিত মাছ না পেয়ে নদীর পাড়ে চুপচাপ বসে আছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের যেখানে জালভর্তি মাছ পেয়ে মুখে হাসির ঝিলিক লেগে থাকার কথা, সেখানে অধিকাংশ জেলের মুখ ছিল মলিন।

পাবনার বেড়া থানার জগন্নাথপুর এলাকা থেকে বুধবার রাতে মাছ ধরতে গোয়ালন্দে আসেন জেলে আলমগীর মণ্ডলসহ চারজন। রাতে তিনটি খেও (জাল ফেলা) দেয়ার পরও তেমন মাছ না পেয়ে সকালে দৌলতদিয়ার বন্ধ থাকা ১ নম্বর ফেরিঘাটের পাড়ে নোঙর করে ছিলেন তারা।

তিনি বলেন, ‘অভিযানের সময় আমরা নদীতে আসিনি। ওই সময় বেশি মাছ পাওয়া যেত। অভিযান শেষে নদীতি নামি দেহি কোনো মাছ নাই। রাতভর তিন ক্ষেপ দিইয়া মাত্র ৮-১০ কেজি মাছ পাইছি। তাও সব ফকা (ছোট) মাছ। মাত্র ২৫০ টাকা কেজি দরে বেচিছি। অহন কি আর করমু। মনডা বেশি ভালা নাই। তাই চুপচাপ বইসা আইছি।’

বেড়া থেকে মাছ ধরতে আসা জাহাঙ্গীর বেপারীসহ তিন জেলের মুখেও হতাশার সুর।

তারা বলেন, ‘নৌকা নামাতে এক থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। সবাই গরু-বাছুর বিক্রি করে জাল-নৌকা নামাইছি। তই নদীতে কোথাও মাছ নাই। গেল বছর প্রতি ক্ষেপে ১০-১৫ কেজি কইরা ইলিশ পাইছি। এবার ভোরে আইসা দুই খেও দিইয়া মাত্র ৮ কেজি ছোট ইলিশ পাইছি।’

দৌলতদিয়া ঘাট টার্মিনাল সংলগ্ন মাছ বাজারের ব্যবসায়ী ইছহাক সরদার বলেন, ‘অন্যবছর অভিযান শেষ অনেক ইলিশ ধরা পড়ত। গত বছর অনেক মাছ বেচাকেনা করেছি। অভিযানের ভেতর কেউ কেউ লুকিয়ে মাছ ধরেছে। মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে অনেকে। আর অভিযান শেষে ভালো মাছ ধরা পড়বে এ আশায় অনেকে ধারদেনা করে জাল ও নৌকা নামিয়েছে। নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে আমরা হতাশ হচ্ছি।’

গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ বলেন, ‘অভিযানের আগে যে পূর্ণিমা ছিল ওই সময় অধিকাংশ মাছ এসে ডিম ছেড়ে গেছে। ওই সময় উজানের দিকে কিছু মাছ ধরাও পড়েছে। যে কারণে এখন নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। জেলেরা মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে যাচ্ছে।’

রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, পদ্মায় চর পড়ে পানির গভীরতা অনেক কমে গেছে। নিচের দিকে নদীতে প্রচুর সংখ্যক জাল ফেলায় মাছ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এসব কারণে কম পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।

সূত্র: ইউএনবি

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।