এএসপি আনিসুলকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ:১০ জনকে গ্রেফতার

ক্রাইমবাতা রিপোট:ঢাকা:  :  চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপকসহ ছয়জনকে আটক করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তবে, এটি মানতে নারাজ ভুক্তভোগীর পরিবার। তাদের দাবি, কর্মচারীদের মারধরের কারণেই মৃত্যু ঘটেছে এই পুলিশ কর্মকর্তার।

সোমবার হাসপাতালের একটি কক্ষে তাকে প্রবেশ করিয়ে মারধর করা হয়। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানোর পর হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী তাকে মাটিতে চেপে ধরে। তারপর আরও দুইজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরে। এসময় আনিসুল করিমের মাথার দিকে থাকা দুইজন তাকে কুনুই দিয়ে আঘাত করছিলেন। আনিসুল করিমকে মারধরের সময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ঘটনা দেখছিলেন।

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার চার মিনিট পর আনিসুলকে উপুড় করা হলে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। এসময় একজন কর্মচারী তার মুখে পানি ছিটালেও তিনি নড়াচড়া করছিলেন না। তারপর কর্মচারীরা সেই কক্ষের মেঝে পরিষ্কার করেন। ঘটনার সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে এবং ১৩ মিনিটের মাথায় তার বুকে পাম্প করেন।

আনিসুল করিম ৩১-তম বিসিএসের কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩-তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

 

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মীদের মারধরে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, এটি হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মঙ্গলবার দুপুরে ১২টায় শ্যামলীতে উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। মারধরের ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনার পর তার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলছে পুলিশ।

হারুন অর রশীদ বলেন, এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড

তিনি বলেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার সাথে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থাপনার জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারি হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

এছাড়া মাইন্ড এইড নামের ওই বেসরকারি হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গতকাল সোমবার সকালে আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি হতে এসে হাসপাতাল কর্মীদের মারধরে মৃত্যু হয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুল করিমের।

হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট কক্ষের ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, হাসপাতালে ৬-৭ কর্মী টেনে হিচড়ে ওই কক্ষের মধ্যে নিয়ে আসে আনিসুলকে। সেখানে তাকে কয়েকজন চেপে ধরে রাখতে দেখা যায়। একইসাথে কয়েকজন তাকে কনুই দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। দীর্ঘক্ষণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকলেও আনিসুলের চিকিৎসার ব্যাপারে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে তাকে শ্যামলী জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।