রুহুল কুদ্দুস: আশাশুনি: সুপার সাইক্লোন আম্পান বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহেনস হোস। শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে তিনি বিধ্বস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করে বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনেন।
জার্মান রাষ্ট্রদূত এসময় কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনকে দায়ী করে বলেন, জার্মান সরকার বাংলাদেশ জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ৩০০ মিলিয়ন ইউরো প্রদান করেছেন। জার্মান সরকার দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহেনস হোস আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন আর গরীব দেশ নয়, এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এর পরেও সরকার যদি জার্মান সরকারের কাছে সহযোগিতা চায় জার্মান সরকার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সাথে দেখবে। তিনি আরও বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলা অসহায় মানুষের নিজস্ব উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা প্রদান করছি।
আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করেছেন। দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের কেবল অন্তর্ভূক্ত হবে। আমরা সব সময় গরীব দেশের সহযোগিতায় কাজ করে থাকি। বাংলাদেশের সাথে জার্মানির সুসম্পর্ক রয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার সৌন্দর্য, পরিবেশ, বাতাস সবুজের মনোরম পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। রাষ্ট্রদূতের সফর সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশ জার্মানি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ভ্যান মিট ল্যাভ।
জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহেনস হোস কোভিড-১৯ করোনা চলাকালিন প্লাবিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এর ডিডি জাকির হোসেন, এএসপি সার্কেল ইয়াছিন আলি, সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহিন সুলতানা, ওসি গোলাম কবির, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নান, শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা সাকিল, প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
আশাশুনির শ্রীউলা ইউনিয়নের মাড়িয়ালা মোড়ে শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের বানভাসি ২৫০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহেনস হোস। ত্রাণের প্রতি প্যাকেটে ছিল ২৫ কেজি চাউল, এককেজি ডাউল. পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও সাবান।
এরআগে শুক্রবার বিকেলে জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারহেনস হোস আকস্মিক সফর করেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জালালাবাদ গ্রামের ঋষিপাড়া। এসময় সেখানকার গ্রামীন ঐতিহ্য হস্তশিল্প দেখে অভিভূত হন তিনি। দোভাষীর মাধ্যমে তিনি কথা বলেন হস্তশিল্পী তৈরীর প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের সাথে।
হস্তশিল্পগুলো কোন কোন দেশে রপ্তানী হয়, এগুলো তৈরী করতে কি কি কাঁচামাল লাগে সেগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। পাশাপাশি হস্তশিল্প তৈরির কারিগরদের আর্থিক অবস্থারও খোঁজখবর নেন রাষ্ট্রদূত।
জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বহির্বিশ্বে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার আস্তে আস্তে কমানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য প্রাকৃতিক ব্যাগ, আসবাবপত্রের প্রয়োজন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।’
হাতে তৈরী এসকল নিত্যপ্রয়োজনীয় সেট জার্মানে রপ্তানি করার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান। পরে তিঁনি বিষ্ণু নামে স্থানীয় এক অসহায় ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ৫হাজার টাকা সহযোগিতা করেন।