ক্রাইমবাতা রিপোট: তালা: নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার রফিকুলের বিরুদ্ধে দুদকের প্রতিনিধি দল তদন্ত শুরু করেছেন। চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তার সামনে কোনো প্রকল্পের রেজুলেশন বা প্রমানপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। ১২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিনিধি সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে কমিটি সরেজমিন তদন্ত করেন। তদন্তে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
খবরে প্রকাশ, গত ৭ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে তালার তেতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্যদ্বয় চেয়ারম্যান রফিকুলের বিরুদ্ধে অসহনীয় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছেন দুদক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতিপরায়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার, সোলার প্যানেল প্রকল্প, টিআর, কাবিখা, মানব সম্পদ উন্নয়ন খাত, কাবিটা, এডিপিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতের প্রকল্পের নামে কাজ না করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়াও আবেদন কপিতে উল্লেখ আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় ছাদের ঘর দেবার কথা বলে অসহায় দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, এমপি’র বরাদ্দকৃত তিন লক্ষ টাকার রাস্তার কাজ না করা, ২০১৬-১৭ অর্থ বছের মানব সম্পদ উন্নয়ন খাতের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, রাস্তা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের নামে তিন লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কাজ না করে ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরী করে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও ভ্যান গাড়ির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।
এছাড়াও বিগত অর্থবছরের ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীন আয়ের ২০ লক্ষ টাকা, সোলার প্যানেল দেবার নামে ৫০ হাজার টাকা, রাস্তা সংস্কারের নামে লক্ষাধিক টাকা, উন্নয়ন করের ৫০ লক্ষ টাকা কাজ না করেই উঠিয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যান রফিকুল। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিপি ও হাটবাজারের ইজারার টাকা থেকে কাজ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির কাছ হতে জোরপূর্বক ৩০% টাকা নিয়ে নেওয়া। ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবন ভাড়া দিয়ে উপার্জিত অর্থ সরকারি খাতে জমা না দিয়ে লক্ষাধিক টাকা নিজের পকেটস্থ করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ উপায়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় করা। শালিসের নামে ভিক্ষুকের ৩১ হাজার টাকা মেরে দেওয়াসহ ব্যবসার নামে শালিসের নামে আদায়কৃত অর্থ নিজের পকেটস্থ করছেন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
অভিযোগকারীদের মধ্য ৩ বারের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের বক্তব্য আবেদনে লেখা আছে। আমরা যা লিখেছি তার একটিও মিথ্যা নয়। চেয়ারম্যানের খারাপ ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তার সাথে কথা বলা যায় না। নিতান্তই প্রয়োজন না হলে পরিষদে কোনো মেম্বরা যায় না। তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে প্রায় ৭টি মৎস্য ঘেরের মালিক হয়েছেন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি সহ মোশারফ, জাকিয়া সুলতানা ইতি,আলাউদ্দীন সরদার, বাবুর আলী গাজী ইউপি সদস্যরা এক হয়ে চেয়ারম্যান রফিকুলের অনিয়ম দুর্নীতি, সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে দুদকে আবেদন করেছিলাম। অসহায় শিক্ষকে পৈত্রিক সম্পর্ত্তি গায়ের জোরে দখল করে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তারই প্রেক্ষিতে এই তদন্ত চলছে।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্য আলাউদ্দীন বলেন, চেয়ারম্যান একই রাস্তা সংস্কারের নামের কয়েকবার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও একটি প্রকল্পের ৩০% টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় আমার ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রদত্ত সম্মানী না দিয়ে উক্ত টাকা নিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
তদন্ত কর্মকর্তা সাতক্ষীরা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ও উপপরিচালক স্থানীয় সরকার মো. বদিউজ্জামান জানান, এখনও তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন: কোন অনিয়ম হয়নি, আপনারা যা পারেন লেখেন তাতে আমার কিছু হবে না বলে কথা বলার অপরগতা প্রকাশ করে প্রস্থান করেন।