কারাগারে না পাঠিয়ে সাতক্ষীরায় সেই সাজা প্রাপ্ত হাসানুজ্জামানের জীবন কেমন কাটছে

ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা:  সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-২ এর বিচারক ইয়াসমিন নাহার আমাকে কারাগারে না পাঠিয়ে মায়ের মত স্বাভাভিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ওই বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। আদালতের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।’ সরেজমিনে শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি ইউনিয়নের ভাদড়া গ্রামে গেলে রজব আলী সরদারের ছেলে মাদক মামলার এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী হাসানুজ্জামান সরদার এ কথা বলেন।

হাসানুজ্জামান বলেন, এক সময় অসৎ সঙ্গে মিশে অতি লোভে মাদক বহনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি। কয়েকদিনের মধ্যে হাতে নাতে ফল পাই। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাইকেলে করে তিন কেজি গাজাসহ খানপুর নামক স্থানে র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে। পরদিন র‌্যাব-৬ এর জেওসি আব্দুল¬াহ হেল ওয়ার্ছি বাদি হয়ে তার নাম উলে¬খ করে মাদক আইনে মামলা (জিআর-৪৩/১৫ সদর)দায়ের করেন। ৩ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক ও বর্তমানে তালা থানার তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদ ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার নাম উলে¬খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর থেকে মামলা চালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি নিজেকে কৃষি কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য উদ্যোগ নেন। এক বছর আগে থেকে তিনি পার্শ্ববর্তী বিলে প্রতি বছর ৪৮ হাজার টাকা লীজের টাকা দিয়ে তিন বিঘা জমিতে কুল চাষ করার উদ্যোগ নেন। প্রায় ৬০০ কুল গাছ লাগান তিনি। কুল বাগানের নিকটে তিনি প্রতি বছর আট হাজার টাকা লীজের টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে বাবা, মা, দু’মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ভাই হাবিবুর রহমান লাণ্টু কয়েক বছর মালয়েশিয়ায় থাকার পর বর্তমানে তারই পাশে এক ভিটায় বসবাস করেন। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে নয় শতক জমি কিনে পরে তারা জানতে পারেন তা সরকারি খাস জমি। এ সুযোগে স্থানীয় জামায়াত নেতা আব্দুল মাজেদ তাদের তিন শতক জমি জোর করে দখল করে নিয়েছে। প্রশাসনের কাছে দেন দরবার করেও আজও ওই জমি ফিরে পাননি তারা।

হাসানুজ্জামান আরো বলেন, গত ১০ নভেম্বর মঙ্গলবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার মাদক বিক্রির অভিযোগে তাকে এক বছর কারাদ- দেন। তবে প্রবেশন হিসেবে তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেন। এজন্য তাকে পাঁচটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্তগুলো হলো,(১) কোনরুপ মাদক দ্রব্য সেবন করা যাবে না, কোন খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে চলা যাবে না,(২) প্রতি ছয় মাস অন্তর বাড়িতে ১০টি করে গাছ লাগাতে হবে,(৩) বাবা- মায়ের সেবা করতে হবে(৪) সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদক বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে (৫) তিন মাস অন্তর আদালতে হাজিরা দিতে হবে। সমাজমেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। এরই অংশ হিসেবে তিনি শনিবার সকাল থেকে স্থানীয়দের নিয়ে মাদক বিরোধী প্রচারনা শেষে মানববন্ধন করেছেন। বাড়িতে চারটি গাছ লাগিয়েছেন। জীবন জীবিকার তাগিদে তিনি নিয়মিত কুলগাছ পরিচর্যার পাশপাশি মাছ চাষে সময় কাটান। অবসর সময়ে অন্যের জমিতে কাজও করেন তিনি। এ ছাড়া বাবা ও মাকে যথাযথ ভাবে সেবা যতœ করে থাকেন। এতে তার দু’সন্তান, স্ত্রী ও বড় ভাই খুশি। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তারা সব ধরণের সহযোগতিা করবেন। এর ব্যত্তয় হলে তারা তাকে আদালতে সোপর্দ করিয়ে দেবেন। বাবা রজব আলী সরদার, মা আকলিমা খাতুন ও বড় ভাই হাবিবুর রহমান লাল্টু বলেন, প্রচলিত আইনের ব্যত্তয় ঘটিয়ে বিচারক ইয়াসমিন নাহার যেভাবে হাসানুজ্জামানকে স্বাভাভিক জীবনে ফিরে আসার সূযোগ করে দিয়েছেন তা তারা চিরজীবন মনে রাখবেন। এজন্য তারা ওই বিচারকের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

হাসানুজ্জামানের আইনজীবী এড. ফখরুল আলম বাবু বলেন, বিচারক ইয়াসমিন নাহার প্রচলিত আইনের বাইরে যেয়ে প্রবেশনে হাসানুজ্জামানকে পরিবারের মধ্যে থেকে কিছু শর্ত আরোপ করে যেভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সূযোগ করে দিয়েছেন তা দৃষ্টান্তস্বরুপ। প্রবেশনের জন্য কোন আবেদন না করার পরও জীবনের প্রথম অপরাধী হিসেবে তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনিও বিচারক ইয়াসমিন নাহারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন বলেন, তিনি হাসানুজ্জামানের বিষয়ে তিন মাস পরপর আদালতে রিপোর্ট জমা দেবেন।

Check Also

বাংলাদেশে একটি সফল ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি: মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।