ভারতীয় উপমহাদেশের রূপালী পর্দার কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন। রোববার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার পর কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর।
তিনি প্রায় এক মাস ধরে কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোমে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ৬ অক্টোবর করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ হন সৌমিত্র। পরে নেগেটিভ আসার পর ইনটেনসিভ ট্রমা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিশেষ মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। নেগেটিভ হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে সৌমিত্রকে ‘এন্ডোট্র্যাকিয়াল ইনটিউবেশন’ বা ভেন্টিলেশনে দেয়া হয়। পাশাপাশি তার কিডনির সমস্যাও ধরা পড়ে।
বাঙালি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টপাধ্যায় অস্কারজয়ী সত্যজিত রায়ের সহযোগী এবং ফেলুদা সিরিজের জন্য বেশ সুপরিচিত। ফেলুদা ছাড়াও সত্যজিতের আরও অনেক সিনেমায় দেখা গেছে তাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অপুর সংসার। এছাড়া তিনি অশনী সংকেত, ঘরে বাইরে, চারুলতা, শাখা প্রশাখা, সাত পাকে বাঁধাসহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
দাদা সাহেব ফাল্কে পুরস্কার জয়ী সৌমিত্রের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দু:খ ভরাক্রান্ত হৃদয় দিয়ে ঘোষণা করছি যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজ (১৫ নভেম্বর) বেলভিউ ক্লিনিকে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনার সঙ্গে একাধিক রোগে ভুগছিলেন। তিনি প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এটা নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছিল ফুসফুস ও মস্তিষ্কে। মূত্রথলিতেও সংক্রমণ হয়েছিলো তার। এতকিছুর কারণে এই বার্ধক্যে তার শরীর ধকল সইতে পারছিলো না।
উল্লেখ্য, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে ছিলেন প্রযোজক, গল্পকার, অভিনেতা কবি ও আবৃত্তিকার৷ মঞ্চেও দুর্দান্ত একজন অভিনেতা ছিলেন তিনি। ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে পেশাজীবন শুরুর পর সিনেমার রূপালী পর্দায় ডাক পান ১৯৫৯ সালে, অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার জন্য।
ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ প্রদান করে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন।