ক্ষমা চাইলেন সাকিব

করোনাভাইরাসের মধ্যে দেশে ফিরে ১২ ঘণ্টা না পার হতেই একটি সুপার শপ উদ্বোধন করে নানা সমালোচনার শিকার হন সাকিব আল হাসান। এরপর বির্তক হয় তার ফিটনেস টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে। সেই সমালোচনার রেস কাটতে না কাটতে সড়ক পথে কলকাতা যান দেশ সেরা এই ক্রিকেটার। কলকাতা যাওয়ার পথে ভক্তের মোবাইল ভেঙে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন তিনি । সেখানে পূজার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় গালাগাল ও হত্যার হুমকিও পান সাকিব।

আর এ সব কিছুর ব্যাখ্যা দিতে অবশেষে আজ সোমবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করেন সাকিব। ব্যাখ্যায় সাকিব যা বলেন তা হুবহু তুলে ধরা পাঠকদের জন্য-

‘আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আশা করি, সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। জাস্ট দুটি বিষয় ক্লিয়ার করার জন্য আপনাদের উদ্দেশ্যে এই ভিডিওটি করা।

প্রথমটি, ফোন ভাঙা নিয়ে। আমি কখনোই আসলে বুঝতে পারি না, আমি অন্য একজনের ফোন ভাঙলে সেটাতে আমার আসলে কী উপকার হবে কিংবা আমি কী বেনিফিট পাব। আপনারা হয়তো ভালো অ্যান্সার দিতে পারবেন এটার।যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ফোন আমি কখনোই ইন্টেনশনালি ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন সময়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছিলাম, সবসময় কীভাবে নিজেকে সেফ রেখে চলাফেরা করা যায় সেটারই চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু অনেক মানুষ ছিল সেখানে এবং অনেক ভিড় ছিল, সবাই চেষ্টাও করছিল ছবি তুলতে, আমি আসলে চেষ্টা করছিলাম তাদের কাছে না গিয়ে কীভাবে আমার কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারি। ইমিগ্রেশনের।

তো স্বাভাবিকভাবেই একজন উৎসুক জনতা একদম আমার শরীরের উপর দিয়ে এসে ছবিটি তুলতে যায় এবং আমি তাকে সরিয়ে দিতে গেলে তার হাতের সাথে আমার হাতটি লাগে এবং তার ফোনটি পড়ে যায় এবং হয়তো পড়ে ভেঙেও গিয়েছে। তো তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয়, তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। স্পেশালি এই করোনার সময় আমার মনে হয়, সবারই একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যতদিন এই করোনার ইফেক্টটা থাকে।

দ্বিতীয় যে ঘটনাটি অবশ্যই খুব সেনসিটিভ। আমি বলতে চাই, আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবে মনে করি এবং আমি সেটাই চেষ্টা করি মনে করার। ভুল-ত্রুটি হবেই এবং ভুল-ত্রুটি নিয়েই আমরা আসলে জীবনে চলাচল করি। আমার কোন ভুল হয়ে থাকলে আমি অবশ্যই আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি কিংবা আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এখন আসি পূজার বিষয়টি নিয়ে। এখন নিউজ কিংবা মিডিয়াতে এসেছে যে, আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। যেখানে আমি আসলে যাইওনি কিংবা করিওনি। এটির প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সেখানে ছিলেন কিংবা যাদেরকে ইনভাইট করা হয়েছিল। আপনারা যদি সেখানকার ইনভাইটেশন কার্ডটা দেখেন, কার্ডে আসলে লেখা আছে যে, কে আসলে সেটার উদ্বোধন করেছে এবং সেটি হয়েছে আমি যাবার আগে। যে জায়গাতে আমাদের প্রোগ্রামটি হয়েছে, সেটি আসলেই পূজামণ্ডপ ছিল না এবং পাশে আরেকটি স্টেজ ছিল, সেখানে করা হয়েছিল। প্রায় ৪৫ মিনিটের একটি অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম এবং সেখানে ধর্ম-বর্ণ কোনোকিছু নিয়েই আসলে কথা হয়নি।

অনুষ্ঠান শেষে যখন গাড়িতে উঠতে হবে… অনেকগুলো রাস্তা আসলে বন্ধ ছিল। স্বাভাবিকভাবেই আমাকে ওই পূজামণ্ডপটি ক্রস করে যেতে হতো। যেটি আমি গিয়েছি। যাওয়ার সময় পরেশদা, যিনি আমাকে ইনভাইট করেছিলেন, তার রিকোয়েস্টে আমি প্রদীপ প্রজ্বলন করি এবং আমি কলকাতায় আমি অনেকদিন খেলেছি এবং কলকাতার মানুষ আমাকে অনেক পছন্দ করে, ওখানকার সাংবাদিকরা অনেক উৎসুকও ছিল, সবার রিকোয়েস্টে প্রদীপ প্রজ্বলনের সময় পরেশদার সাথে ওখানে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তোলা হয়। ছবি তুলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সাথে আমার… যারা নিরাপত্তাকর্মী ছিল, তাদের একটু বাকবিতণ্ডাও হয়, একটু হাতাহাতিও হয়। সেকারণে ওইদিক দিয়ে আমরা আর যেতে পারিনি। পরে আবার ব্যাক করে অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। তো পুরো ঘটনাটা ছিল এরকম।

দুই মিনিটের যে সময়টা আমি পূজামণ্ডপে ছিলাম, সেটি নিয়ে সবাই বলেছে। তারা ধারণা করেছে, আমি পূজার উদ্বোধন করেছে, যেটি আমি কখনোই করিনি এবং একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি হয়তো করব না। তারপরও ওখানে যাওয়াটাই আমার হয়তো ঠিক হয়নি, সেটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমি মনে করি, আপনারা এটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ভবিষ্যতে এরকম কোনো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্যও আমি চেষ্টা করব।

আপনাদের ইনফ্রমেশন দেওয়ার জন্য আমি আসলে বলে দেই, কে পূজার উদ্বোধক ছিলেন। আমার কাছে ইনভাইটেশন কার্ডটাও আছে। উদ্বোধক ছিলেন হচ্ছে ফিরহাদ হাকিম, প্রশাসনিক প্রধান, কলকাতা পৌরসভা, মন্ত্রী, পশিমবঙ্গ সরকার। আমি যাবার আগেই তিনি আসলে পূজার উদ্বোধন করে গিয়েছিলেন। তারপর আমি গিয়েছি।

আসলে একটি ছবি দেখে আপনি কখনোই একটি ঘটনা অনুমান করতে পারবেন না বলে আমার মনে হয়। কখনোই আমার ইন্টেনশন ছিল না যে, আমার ধর্মকে ছোট করে অন্য কোনো ধর্মকে বড় করব কিংবা অন্য কোন ইস্যুই ছিল না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমার জ্ঞান খুবই কম। তারপরও আমি চেষ্টা করছি এবং ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব ইসলাম সম্পর্কে যত জ্ঞান নেওয়া যায়।

এমন কিছু যেন আমরা না করি যেটা মানুষকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় যে আমরা আসলে এক নাকি আলাদা। কারণ, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এক থাকব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শক্তিশালী।… আমি মনে করি, আমরা যারা মুসলমান আছি, এক থাকব সবসময়। কারণ, আমাদের এক থাকা জরুরি। যখনই আমরা আলাদা আলাদা হয়ে যাব, তখনই আমরা দুর্বল, যখনই আমরা এক থাকব, তখনই আমরা স্ট্রং।

কিন্তু একটা জিনিস আমি বলতে চাই যে, দুই-এক জায়গায় দেখছি যে, আমি আসলে দেখছি না, আমি এসব নিয়ে ফোকাস করি না, তারপরও অনেকে অনেক কিছু… যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, আপনি চাইলেও অনেক কিছু ইগ্নোর করতে পারবেন না। যেহেতু আমার নামের সামনে অনেকেই শ্রী, শ্রী কিংবা সিঁদুর, প্রদীপ, মন্দির অনেক কিছু দিয়ে অনেক কিছু বলছেন, এতে আমরা আমাদের ধর্ম ইসলামকে কতটা উপরে নিচ্ছি বা নিচে আনছি, তা আমার বোধগম্য নয়। আশা করি, আমরা সবাই আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করব। তারপরও আমি আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের সকলের কাছ থেকে। চেষ্টা করব, নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবে।’

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।