পর্যাটকদের পদচারণায় মুখরিত সুন্দরবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার কারনে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত ১ নভেম্বর পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। বন্ধ সময়ে ছিল না কারও পদচারণা। প্রকৃতি নিবিড় আলিঙ্গনে মেতে ছিল। কোথাও কোনো দূষণ ছিল না। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী-খালে জলজপ্রাণীর ছিল অবাধ বিচরণ। বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগে মলিন হওয়া প্রকৃতি আপন শক্তিতে নিজেকে পূরণ করেছে। পর্যটকশূন্য সুন্দরবনে জেগে উঠেছে প্রাণ-প্রকৃতি। সুন্দরবনের মুন্সীগঞ্জ, কলাগাছিয়া, কটকা, হিরনপয়েন্ট, হাড়বাড়িয়া, আন্ধারমানিক সহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো দীর্ঘ বিশ্রামে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ছুটি কাটিয়ে সুন্দরবনে জীবিকা আহরণকারীরা আবার কাজে ফিরেছেন। আবার পূর্ণোদ্যমে ফেরা জেলে-বাওয়ালি-মৌয়ালরা বলছেন, সুন্দরবনে আগের তুলনায় পশু-পাখি অনেক বেশি চোখে পড়ছে। খোলপেটুয়া নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের দেখা মিলছে। এমন দৃশ্য আগে কখনো কল্পনাও করা যায়নি। নদী-খালে মিলছে চিংড়ি, দাতিনা, ভোলা, পারশেসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছও। সুন্দরবনসংলগ্ন শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান জানান, এ অঞ্চলের অনেক মানুষের জীবন চলে সুন্দরবনে পর্যটকদের অর্থে। ব্যবসা-বাণিজ্য বা ট্রলার ভাড়া দিয়ে চলে অনেকের জীবিকা। সেটি করোনাকালে স্থবির হয়ে পড়েছিল। তিনি বলেন, দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন চোখে না পড়লেও সুন্দরবনে জলদস্যু-বনদস্যুর আনাগোনা অনেকটা কম দেখা যাচ্ছে। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে পশ্চিম সুন্দরবনের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার সুন্দরী, গেওয়া, গরানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আগ থেকে সুন্দরবনে সব ধরনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ থাকায় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত গাছগুলো ওই অবস্থায়ই রাখা হয়। ওইসব গাছ নতুনভাবে কসমি ছেড়ে সুন্দরবনকে অনেকটা স্বাভাবিক করে তুলেছে। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, ২৯ মার্চ থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত করোনার কারণে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। দীর্ঘ সাত মাস পর্যটক বন্ধ থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে মাছ, পাখি, ডলফিন, হরিণের আনাগোনা অনেক বেড়েছে। প্রাণিকুলের পছন্দের নীরব পরিবেশে স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় পর্যটক না যাওয়ায় নদী দূষণ থেকে রক্ষা পেয়েছে। কারণ পর্যটকরা নদীতে পানির বোতল, ওয়ানটাইম প্লেট, খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে থাকেন। সেগুলো থেকে সুন্দরবনের নদীর পরিবেশ অনেকটা রক্ষা পেয়েছে। এ কারণে সুন্দরবনের মধ্যে ছোট নদীগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের দেখা মিলছে। গাছপালাগুলোও প্রাকৃতিক নিয়মে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবমিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়েছে সুন্দরবনে।

Check Also

বাংলাদেশে একটি সফল ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি: মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।