চাঁদপুর প্রতিনিধি: সম্প্রতি চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে ড্রামের ভেতর উদ্ধার হওয়া নিহত সিদ্দিকুর রহমান (৩৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি সারোয়ার আলম (২৫)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। গ্রেপ্তার হওয়া আসামি ইতিমধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এই নিয়ে বুধবার চাঁদপুরে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিহত সিদ্দিকুর রহমান হত্যার কারণ তুলে ধরা হয়।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শঙ্কর কুমার উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ১০ নভেম্বর কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকার একটি বাড়িতে সারোয়ার আলম তার সহযোগীকে নিয়ে নিকটাত্মীয় বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ড্রামে করে চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সড়কের পাশে ফেলে যায়। এই ঘটনার পর পেশায় ফ্রিজ মিস্ত্রি সারোয়ার আলম কৌশলে আত্মগোপন করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গত সোমবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
এ সময় নিহত সিদ্দিকুর রহমানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, মুঠোফোন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সামগ্রীও উদ্ধার করে পিবিআই। পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনার শিকার সিদ্দিকুর রহমান এবং আসামি সারোয়ার আলমের বাড়ি কুমিল্লা সদরের কাজীপাড়া এলাকায়। সম্পর্কে তারা ছিলেন চাচা ও ভাতিজা।
ভাতিজা সারোয়ার আলম তার চাচার কাছে নিজের বসতঘরে আসা যাওয়ার সড়কের জন্য ১০ ফুট জায়গা দাবি করেন। এতে চাচা সিদ্দিকুর রহমান তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই নিয়ে কয়েক দফা সালিস বৈঠকও হয়। আর গত ৯ মাস আগে এমন আব্দার করে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখে দেখে চাচাকে হত্যার কৌশল রপ্ত করেন ভাতিজা সারোয়ার আলম।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ নভেম্বর কুমিল্লা বিশ্বরোডের পাশে পদুয়ার বাজারের একটি ভাড়া বাড়ি নিয়ে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে কাবু করে সিদ্দিকুর রহমানকে। পরে ধারাল চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাতে শনাক্ত করতে না পারে- তার জন্য নিহতের দুই হাতের বুড়ো আঙুল থেঁতলে দেওয়া হয়। পরে নিহতের লাশ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহরাস্তি উপজেলার রাজাপুর এলাকায় ফেলে গা ঢাকা দেয় সারোয়ার আলম ও তার আরেক সহযোগী।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শঙ্কর কুমার আরো জানান, চাচাকে কিভাবে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়-তা পুলিশ এবং আদালতের কাছে অকপটে স্বীকার করেছেন সারোয়ার আলম। আর এই ঘটনায় জড়িত অন্যজনকেও খোঁজা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুরে পিবিআইয়ে কর্মরত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ঘটনার দায় স্বীকার করে চাঁদপুরের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর আসামি সারোয়ার আলমকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলা পিবিআই তদন্ত করলেও নিহতের মা লুৎফুন্নাহার শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
প্রসঙ্গত, নিহত সিদ্দিকুর রহমান প্রথম স্ত্রী রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তাকে হত্যার পর পরিবারের ধারণা ছিল প্রথম স্ত্রী প্রতিশোধ নিতে স্বামীকে হত্যা করেছে। তবে পিবিআই হত্যায় জড়িত মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের জট উম্মোচিত হলো।