উপকূলীয় জেলে পরিবারের ৬৫ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উপকূলীয় নারী মৎস্যশ্রমিকবৃন্দ তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় কম মজুরি পাচ্ছেন। অন্যদিকে জেলে পরিবারের বেশিরভাগ নারী সদস্যই কোন না কোনও সহিংসতার শিকার। বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের এক গবেষণায় এসব তথ্য পেয়েছে।

রবিবার (২২ নম্বেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা হয়। কোস্ট ট্রাস্টের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ‘ক্ষমতায়ন সূত্রের বাইরে উপকূলীয় জেলে পরিবারের বেশিরভাগ নারী: টেকসই মৎস্যখাতের জন্য নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যক’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । এতে গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল উাপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের যুগ্ম পরিচালক মজিবুল হক মনির এবং স্বাগত বক্তৃতা করেন একই সংগঠনের পচিরালক (প্রশাসন) মোস্তফা কামাল আকন্দ।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, কক্সবাজার এবং বাগেরহাটের ১২০০ জেলে পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকার জেলে পরিবারের নারী সদস্যবৃন্দের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও ক্ষমতায়নের অবস্থা তুলে আনা হয়েছে।

সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করতে গিয়ে মজিবুল হক মনির বলেন, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী শ্রমিকদের সবাই পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় দৈনিক প্রায় ২৫ শতাংশ কম মজুরি পাচ্ছেন। সম্পদ কেনাকাটায় জেলে পরিবারের ৩১ শতাংশ নারীরই কোনও মতামত গ্রহণ করা হয় না, পরিবারের সাধারণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৫৮ শতাংশ নারী সদস্যরেই কোনও মতামত নেওয়া হয় না। অন্যদিকে জেলে পরিবারের মাত্র ২ শতাংশ নারী সদস্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কোনও বিশেষ প্রয়োজনে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন এবং সমাজের কোন সালিশে বা অন্য কোনও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জেলে পরিবারের ৮২ শতাংশ নারীই কোনওদিন কোনভাবে অংশ গ্রহণ করেননি। তাছাড়া জেলে পরিবারের নারী সদস্যদের ৬৫ শতাংশ কোনও না কোনও সহিংসতার শিকার এবং পুরুষ সদস্য মাছ ধরতে বাড়ির বাইরে থাকলে তাদের প্রায় সবাই আতংকে থাকেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইসরাইল পন্ডিত বলেন, সরকার মুক্ত জলায়শ নারীদেরকে লিজ দিতে পারে তাহলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং ক্ষমতায়িত হবে নদীতে যে চর জাগে তা কৃষকদের বরাদ্দ দেয়া হয় এসকল চর জেলেদের বরাদ্দ দিলে বিকল্প কাজের সৃষ্টি হবে। এডাবের প্রতিনিধি আনামিকা বলেন, ক্ষুদ্রঋণ নারীরা গ্রহন করে কিন্তু তা খরচ করার স্বাধীনতা তাদের নেই, এই টাকা খরচের জন্য তাদের মতামত নিতে হবে। সালেহা ইসলাম শান্তনা বলেন, শ্রম আইনে নারী-পুরুষের বৈষম্য না থাকলেও, নারী জেলেরা স্পষ্ট বৈষম্যের শিকার। কঠোর আইন প্রয়োজন। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকুয়াকালচার বিষয়ক প্রভাষক মোহম্মদ আলী বলেন, নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে নারীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বলেন, নারীদের জন্য কাজের পরিবেশ তৈরী করে দিতে হবে যাতে তারা সঠিকভাবে মৎস্য সেক্টরে কাজ করতে পারেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি শিল্পী দে বলেন, নারী উন্নয়নের সরকারী নীতিমালা ২০১১ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণ থেকে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষে বিশ্বে ৫ম, নারীর অংশগ্রহণ এক্ষেত্রে স্বীকৃত হলে আমাদের এই অর্জন টেকসই করা সহজ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো: মৎস্য খাতে নারীর অবদান চিহ্নিত করতে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন, জেলে পরিবারের নারী সদস্যদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা, নারী জেলেদের মৎস্যজীবী হিসাবে সরকারী আইডি কার্ড প্রদান করা, মৎস্যখাত সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত, মৎস্যশ্রমিকদের জন্য শ্রম নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আমিনুর রসুল বাবলু, এ এস এম বদরুল আলম, এইচ,এম সহিদুল আলম ফারুক, আসাদুজ্জামান শেখ, হাসান আল মামুন, তাসনুভা জামান, শামীম আরা প্রমূখ।

Check Also

আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।