ছাত্র বিক্ষোভের মুখে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়া (দাওরায়ে হাদীস) মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ক’দিন ধরে সেখানকার শিক্ষার্থীরা একজন শিক্ষকের চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ ও অধ্যক্ষের অপসারণের (মুহতামিম) দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাংচুর ও প্রতিবাদ করে আসছিল। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যর্থ হয়ে রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক ও কিছু বহিরাগত লোকের ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা সভাপতির উপস্থিতে মাদরাসার মসজিদের দরজা ও জানালা ভাংচুরের জন্য চেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন উস্কানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। ফলে মাদরাসার সভাপতি মো: হারুন শেখ ও অন্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে মাদরাসা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে চলে যান। পরে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মাদরাসার সহ-সভাপতি মো: বিল্লাল পাটওয়ারীর মাধ্যমে মাদরাসা প্রাঙ্গনে সন্ধ্যায় শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা শিক্ষক, এলাকাবাসী, সাংবাদিক ও প্রশাসনের উপস্থিতে এক ঘোষণার মাধ্যমে মাদরাসাটির শিক্ষা কার্যক্রমসহ সকল কার্যক্রম অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসিম উদ্দিন, ওসি তদন্ত হারুনুর রশিদ, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: জাহাঙ্গীর আলম, বেগম ইন্ডাষ্টির পরিচালক হাবিবুর রহমান, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী বিল্লাল পাটওয়ারি, কোষাধ্যক্ষ হাজী আবুল কাসেম গাজী, গণ্যমান্য ব্যক্তির মধ্যে আরশাদ মিজি, গাজী মোঃ হাসান, হারুন খা, নিলু হাওলাদার প্রমূখ।
মাদরাসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পর রোববার বিকেলের মধ্যে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা মাদরাসার হল ত্যাগ করে তাদের বাড়ি চলে যেতে দেখা যায়। এসময় মাদরাসা এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শহরের পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম জানান, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মাদরাসা আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মাদরাসায় অবস্থান করে ছাত্র-শিক্ষকদের বুঝিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত সবাই যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখে সে অনুরোধ করি।
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়াা (দাওরায়ে হাদীস) মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থী মাদরাসা শিক্ষককে চাকরিচ্যুত, অধ্যক্ষের অপসারণ, বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও মাদরাসায় প্রায় তিন ঘন্টা মুহতামিমকে অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তারা মোহতামের অফিস কক্ষে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরও চালায় এবং পুরনো শিক্ষক হাফেজ মনসুর সাহেবকে পুর্নবহালেরও দাবি জানান।
এ বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জাফর আহম্মেদ বলেন, আমাদের এই মাদরাসায় হেফজ বিভাগে দু’জন হাফেজ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এদের মধ্যে হাফেজ মুনছুর আহম্মেদের বাড়ি মাদরাসার কাছে হওয়ায় তিনি প্রতিদিন বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন এবং কিছু হলেই এলাকার লোকজন দিয়ে মাদরাসায় প্রভাব বিস্তার করতের। প্রতিদিনই ছাত্রদের পড়া দিয়ে তিনি বাড়ি চলে যেতেন। এ নিয়ে ছাত্রদের অভিযোগের কারণে আমি কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে মুনছুর আহম্মেদকে ডেকে সতর্ক করি, যেন বাড়িতে আসা-যাওয়া কম করে। ছাত্রদের পড়ার মান দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তা বাড়াতে হবে। এ কথা বলার পর তিনি ১৬ নভেম্বের অব্যাহতিপত্র জমা দেন এবং তিনি আর চাকরি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
অন্যদিকে আন্দোলনরত ছাত্ররা জানায়, এর আগেও হঠাৎ করে দু’জন সুযোগ্য হাফেজ নূর মোহাম্মদ ও এই এলাকার কৃতি সন্তান যিনি এই মাদরাসায় দীর্ঘ ২১ বছর কোরআনের খেদমত করে আসছেন। মাদরাসা থেকে চলে যাওয়ার কারণ কী? তারা কি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন নাকি যেতে বাধ্য করা হয়েছে? তারা জানায়, ইতোপূর্বে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়া বিনা কারণে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা হলো কেন? যেমন মুফতি শাহাদাত হোসাইন কাসেমী, মুফতি ইসমাইল সাহেব (দা:বা) গত বছর পবিত্র ঈদুল আযহার দিন নূরানী বিভাগের ওস্তাদ ক্বারী রফিকুল ইসলাম সাহেবকে চামড়া কম কালেকশন করায় মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়? মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা হয় কেন? এমন আরো অনেক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ঘটনাস্থলে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করেছে। এব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নাসিম উদ্দিন জানান।