দিল্লিতে আতঙ্ক। চিকিৎসকদের শঙ্কা। হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে করোনা রোগীতে। শীতের আগমনে সেখানে শীতকালীন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম এপিসেন্টার হয়ে উঠতে পারে দিল্লিÑ এমন ভয় চিকিৎসকদের। কারণ, এখন নতুন করে মারাত্মক আকারে করোনা আক্রান্তের শিকারে পরিণত হচ্ছে মানুষ। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, চিকিৎসক ফারাহ হোসেন দিল্লির সবচেয়ে বড় কোভিড-১৯ বিষয়ক হাসপাতালের একজন ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট। মাসখানেক আগে যখন করোনা সংক্রমণ কমে আসে তখন তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। মনে করেছিলেন করোনা থেকে বুঝি মুক্তি মিলছে।
এ নিয়ে তিনি টুইটও করেছিলেন। কিন্তু এক মাস পরে তার মুখে হতাশার সুর। তিনি বলেন, আমি আসলে ভেবেছিলাম আমরা করোনাকে পরাজিত করতে পেরেছি। কিন্তু এখন শীতে সেই সংক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। চিকিৎসকরা আতঙ্কে এই ভেবে যে, দিল্লি হতে পারে শীতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এপিসেন্টার। নভেম্বরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীতে কমপক্ষে এক লাখ ২৮ হাজার মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১২ই নভেম্বর আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫৯৩ জন। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এটাই একদিনে সেখানে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। অন্য যেকোনো রাজ্যের চেয়ে প্রতিদিন দিল্লিতে অধিক সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সব মিলে দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার সেখানে করোনায় মারা গেছেন ১৩১ জন। একদিনে সেখানে এটাই মৃতের সর্বোচ্চ রেকর্ড। রোববার নাগাদ দিল্লিতে মোট মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৮৩০০। যাদেরকে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে তার মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগই করোনায় আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে। এতে সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, জাতীয় পর্যায়ে আক্রান্তের শতকরা হারের তিন গুনেরও বেশি এই হার।
বিস্ময়ের কিছু নেই। হাসপাতালগুলো রোগীতে সয়লাব। আইসিইউ বেডগুলো দ্রুত রোগীতে ভরে যাচ্ছে। দিল্লির বেসরকারি মনিপাল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. হারজিত সিং ভাট্টি বলেছেন, লোকজন বেড পাওয়ার জন্য যেন যুদ্ধ করছে। এমনকি আমার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের জন্য আমি একটি বেড মিলাতে পারি নি। এটা খুব বেদনার। তার হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আছে ৭৫টি বেড। আর আছে ১০টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড। এর সবই এখন রোগীতে পূর্ণ। তিনি আরো বলেছেন, আমার এক সহকর্মী বিকাশ পান্ডে একটি প্রথম সারির হাসপাতালে তার এক আত্মীয়কে ভর্তি করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কোভিড রোগীদের জন্য যে বেড আছে তার জন্য আরো ২৫০ জন রোগীর আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে তাকে অপেক্ষমাণের তালিকায় থাকতে হয়েছে। এ অবস্থা গ্রীষ্মের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।
ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অফিস আদালত, কলকারখানা, মার্কেট এমনকি বিভিন্ন মৌসুমি উৎসবের অনুমোতি দেয়ার পর এই সংক্রমণ এই পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনে তাপমাত্রা যত কমবে, বায়ু দূষণ যত বৃদ্ধি পাবে, তাতে ততই এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
দিল্লিতে ২০০০ বেডের হাসপাতাল লোক নায়েক প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল। সেখানকার ডাক্তার ফারাহ হোসেন বলেন, তিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের ৬০টি আইসিইউ বেডের দেখাশোনা করেন। বর্তমানে সেখানে উপচে পড়ছে রোগী। তাদের বেশির ভাগকে দেয়া হচ্ছে অক্সিজেন, এন্টিভাইরাল, স্টেরয়েড, প্লাজমা, রক্ত পাতলাকরণ ওষুধ। এর মধ্য দিয়ে সংক্রমণকে স্থবির করার চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, হয়তো গ্রীষ্মের তুলনায় কম মানুষ মারা যাবেন শীতে। কিন্তু তাদের উদ্বেগ, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তারা দীর্ঘ সময় এই রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগবেন। এতে তাদের শ্বাসকষ্ট থেকে যাবে। ব্রেন, হৃদপি-, কিডনি, লিভার এমনকি ত্বকে নানা রকম সমস্যা থেকেই যাবে। তাই চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মের সংক্রমণের চেয়ে শীতের সংক্রমণ হতে পারে কিছুটা অন্য রকম।
ডা. ফারাহ হোসেন বলেন, এই সময়ে দু’একজন করে রোগী আসছেন না। এখন রোগী আসছেন গুচ্ছাকারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরো পরিবার বা বন্ধুমহল আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা হাসপাতালে ছুটে আসছেন। এসব মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, একটি দম্পতি, ওই পরিবারের মা ও তার এক ছেলেকে কেই সময়ে ভর্তি করা হয়েছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে।
তিনি আরো বলেন, এখন যেসব রোগী মারাত্মক আক্রান্ত তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগের বেশি হলেন ৫৫ বছরের ওপরে। তবে ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রোগী আসছেন। তিনি বলেন, আমার কাছে যেসব রোগী আসছেন তার মধ্যে তিন ভাগের প্রায় এক ভাগেরই বয়স এই সীমার মধ্যে।