শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার খোঁজ খবর নিতে সাতক্ষীরায় অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল ও দু’ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল

 ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা:  সাতক্ষীরায় আসার পর তারা সার্কিট হাউজে উঠে এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবেন। খোঁজ নেবেন মামলা সম্পর্ক। সুপ্রিম কোর্টে আসামী রাকিবুর রহমানের পক্ষে দায়েরকৃত ক্রিমিনাল মিস মামলা ও হাইকোর্টের খারিজ আদেশ স্থগিতাদেশ সম্পর্কিত আবেদন খারিজ হওয়ার পর  হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ি মামলাটি আগামি আড়াই মাসের মধ্যে কিভাবে শেষ করা যায় তা নিয়েও তারা সংশি­ষ্টদের সাথে পরামর্শ করবেন।
এদিকে এ মামলার ১৫ জন সাক্ষী দেওয়ার পর সোমবার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সাক্ষী দেওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে আরটিভি’র সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী ও সাতনদী পত্রিকার শহীদুল ইসলামকে। তাছাড়া কয়েকজন সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। তাকে দেখে যশোর ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে  কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপর আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
নিম্ন আদালত বাদির পক্ষে রায় না হওয়ায় ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ম আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ম আদালত মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিলে পরবরর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। টির ১৫১/১৫ মামলাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই এ মামলায় বাদি সাক্ষী দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল। মামলায় বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেমউদ্দিনসহ নয়জন সাক্ষী দেন। তবে বাদিকে জেরা করেনি আসামীপক্ষ। ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগষ্ট আসামীপক্ষ মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর উভয়পক্ষের শুনানীর পর আসামী পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ওই মামলাগুলি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ম আদালতকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি গত ৪ নভেম্বর মামলার বাদি মোসলেমউদ্দিন আদালতে সাক্ষী দেওয়ার জন্য হাজিরা দেন। ওইদিন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্ট ক্রিমিনাল মিস কেস খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন উল্লেখ করে বলেন, চেম্বার জজ মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে ২২ নং ক্রমিক রেখে আগামি বছরের ৪ জানুয়ারি শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ সংক্রান্ত আইনজীবীর প্যাডে লেখা সনদ তারা আদালতে উপস্থাপন করেন। বিকালে বিচারক হুমায়ুন কবীর এ সংক্রান্ত শুনানী শেষে আসামীপক্ষকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মূল কপি উপস্থাপন ও বাদির সাক্ষীর জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ১৭ নভেম্বর ও ২২ নভেম্বর তারা সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশের কোন কপি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি। ৩০ নভেম্বর পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়। একপর্যায়ে ২৪ নভেম্বর ক্রিমিনাল মিস কেস ও স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। ফলে মূল মামলার কার্যক্রম চলমান রাখতে আর কোন বাধা রইল না।
সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের দায়িত্বপালনকারি অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. অহিদুজ্জামান, অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল ও দু’জন সহকারি এটর্নি জেনারেল সাতক্ষীরায় আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় ২০তম কবিতা উৎসবে সাম্যের সুর

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় ২০তম কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কবিতা পরিষদ, সাতক্ষীরার আয়োজনে ২০ ডিসেম্বর সকাল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।