সাতক্ষীরায় ১৫ দিনের কন্যা শিশুকে হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখে নিুষ্ঠর বাবা মা

ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা:   সাতক্ষীরায় ঘুমন্ত বাবা-মায়ের কাছ থেকে ‘চুরি হয়ে যাওয়া’ ১৫ দিন বয়সী নবজাতকের লাশ বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।  এ ঘটনায় ওই শিশুর বাবা-মাকে আটক করেছে পুলিশ।  পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের ওই শিশুর বাবা-মা স্বীকার করেছে, তারাই তাকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রেখেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মির্জা সালাহউদ্দিন জানান, সোহান হোসেন নামের শিশুটির লাশ উপজেলার হাওয়ালখালী এলাকায় বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে শনিবার রাত ১টার দিকে তারা উদ্ধার করেন।

সোহানকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়া হয় বলে তার বাবা সোহাগ হোসেন ও মা ফাতেমা খাতুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, পুলিশ সেপটিক ট্যাংক থেকে সোহানের লাশ উদ্ধার করলে ফাতেমা ও সোহাগ হত্যায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।

অভিযোগের বরাত দিয়ে সদর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, সোহাগ স্ত্রী ফাতেমাকে নিয়ে হাওয়ালখালী গ্রামে রাস্তার ধারে নানাবা‌ড়ি‌তে বসবাস করছিলেন।  বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে বাবা-মা ঘুমিয়ে ছিলেন।  সোহাগের অভিযোগ, এসময় কে বা কারা সদ্যজাত শিশুটিকে তুলে নিয়ে যায়।  এ বিষয়ে সদর থানায় একটি জিডি করেন সোহাগ।
শুক্রবার সকাল থেকে সদর থানা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) শিশুটি উদ্ধারে কাজ শুরু করে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে সন্দেহ হওয়ায় সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুললে শিশুর লাশ দেখা যায়।

পুলিশ জানায়, দু’বছর আগে নানির বাড়িতে আশ্রিতা ফাতেমা কলারোয়া উপজেলার সাহাপুর গ্রামের সোহাগ হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। শ^শুর বাড়িতে কিছুদিন থাকার পর পারিবারিক কলহের কারণে আবারও স্বামীকে নিয়ে তাকে আশ্রয় নিতে হয় নানির বাড়ি সদর উপজেলার হাওয়ালখালিতে। গত ১১ নভেম্বর সাতক্ষীরা শহরের আনোয়ারা ক্লিনিকে জন্ম নেয় তাদের একটি পুত্র সন্তান। শিশুটির নাম রাখা হয় সোহান হোসেন।

এরপর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে যেতে হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত ২৫ নভেম্বর বুধবার তারা সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির বারান্দায় ঘুমন্ত মায়ের পাশ থেকে শিশুটি হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবার সোহাগ হোসেন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর্জা সালাহ উদ্দীন জানান, পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেভাজন শিশুটির মা ও বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানান, যে শিশুটি খুবই অসুস্থ ছিল। সে জন্ডিস, রিকেট ও নিউমোনিয়া, হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিল। তিনি জানান, এ সমস্ত কারনে ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনের যোগসাজশে শিশু হত্যা এবং মরদেহ গুমের ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

তিনি আরো জানান, শিশুটির বাবা সোহাগ হোসেন শিশুটিকে মেরে তাদের বাড়ির সামনের সেফটি ট্যাংকির ভিতরে মরদেহটি ফেলে দেয়। আর এ কাজে সহযোগিতা করে তার মা ফাতেমা খাতুন। পুলিশ বিষয়টি জানার পর শনিবার ভোর রাতে মরদেহটি উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বিস্তারিত পরে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জানাবেন বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।