ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে চলতি বছর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, আত্মহত্যা ঘটেছে অনেকগুলি। এসব বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সুশীল সমাজকেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
রোববার সাতক্ষীরা শহরে একটি বেসরকারী সংস্থা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এসময় সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের ধর্ষণের শিকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, এনজিও কর্মী মাধব দত্ত। এসময় তিনি চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, জেলাব্যাপী নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৯৫টি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭টি, ধর্ষণ প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১১টি। এছাড়া হত্যার শিকার হয়েছেন নারী পুরুষ ও শিশু মিলে ৩৮জন। আত্মহত্যার হিসাব পাওয়া গেছে ৩৩টি। এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ছিল ১টি, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল ৯টি, গুম ও অপহরনের ঘটনা ঘটে ৬টি। জোরপূর্বক সম্পদ দখলের ৩টি ঘটনা ঘটে এবং পাচারের ঘটনা ঘটে ১টি।
সব মিলিয়ে সাতক্ষীরায় কমপক্ষে ২২৪টি মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অবশ্য এসব বিষয়ে আইন প্রয়োগ করেছে। বহু আসামী ধরা পড়েছে। অনেক ঘটনার নেপথ্য রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এসবের পরও এ ধরনের ঘটনা কিছুতেই হ্রাস পাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিককালে কলারোয়ায় একই পরিবারের দুই শিশুসহ ৪টি হত্যা, সাতক্ষীরা সদরে শিশু হৃদয় হত্যা, আশাশুনি ও ঝাউডাঙায় শিশু ও প্রতিবন্ধী ধর্ষণ, শ্যামনগরে সাব্বিরকে বস্তায় ভরে হত্যার চেষ্টা, তালার বিউটির আত্মহত্যা, পাটকেলঘাটায় টুম্পার আত্মহত্যা, কলারোয়ার মোসলেম হত্যা, রাজনগরের পারভিন হত্যা এবং সর্বশেষ হাওয়ালখালির নৃশংস বাবা ও মা কর্তৃক তাদের ১৫ দিনের শিশু সোহান হত্যার ঘটনা সাতক্ষীরাবাসীকে নাড়া দিয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়।
এসব তথ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরায় এ বছরের করোনাকালে বাল্যবিবাহ অধিকমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেনীর মানুষ সুযোগ বুঝে তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন এমন বেশ কিছু ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি জানান, খুলনা বিভাগে বাল্যবিবাহের প্রবনতা বেশি। তার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার আলিপুরে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৩০ নভেম্বর জেলা শহরে সাইকেল র্যালী, ১ ডিসেম্বর এইডস দিবস, ৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী দিবস এবং ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।