বীজতলা তৈরি করতে না পারায় উপকূলীয় জেলাসমূহে বোরোর আবাদ নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা: আবাদের লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা: সাতক্ষীরায় সাড়ে ৩ লক্ষ বোরো চাষী দুশ্চিন্তায়

আবু সাইদ বিশ্বাস:   ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: ঘুণিঝড় আম্পান, আপরিকল্পিত চিংড়ি ঘের, জলাবদ্ধতাসহ নানা কারণে এ বছর আমন উৎপাদন ভাল না হওয়ায় উপকূলীয় জেলা সমূহে বোরো আবাদে স্বপ্ন দেখে চাষিরা। কিন্তু সময় মত বোরোর বীজতলা তৈরি করতে না পারায় চাষিদের সেই আঁশায় নিরাশার বাঁধ বেঁধেছে। নভেম্বরের শুরু থেকে চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি করার কথা থাকলেও বিলের পানি না নামায় বীজতলা তৈরি করতে পারছে না চাষিরা। শতাধীক নদ-নদী দিয়ে পানির প্রবাহ না থাকায় নিচু অঞ্চলে পানি নিস্কাশন বন্ধ রয়েছে। ফলে সময়মতো বীজতলা তৈরি করতে না পারায় জেলায় কর্মরত সাড়ে ৩ লক্ষ চাষী বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চিত পড়েছে। এতে আবাদরে লক্ষ্য মাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকরা বিলের পানি সেচ পাম্প দিয়ে নিস্কাশন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে জেলাতে ২ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদেও লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। যা বিগত বছরের তুলনায় ৫শ হেক্টর বেশি। কৃষি বিভাগের সূত্র মতে এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে থাকে। এছাড়া ৬৭ হাজার ২৩০টি ভুমিহীন চাষী ,এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি প্রান্তিক চাষী, এক লক্ষ ৯৫৭টি মাঝারি চাষী, রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২টি ক্ষুদ্র চাষী এবং ছ ১৪ হাজার ৪৮৪টি বড় চাষী বোরো চাষের সাথে জড়িত। জেলায় মোট ১৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ২শ ব্যক্তি সরাসরি কৃষি কাজ করেন। এসব কৃষকের মধ্যে বর্তমান বোরো চাষের সাথে প্রায় ১০ লক্ষ চাষি জড়িত। নানা কারণে জেলাতে বোরোর গুরুত্ব বেড়েছে।
চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৬৮টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ১৬.৩০%। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষি খাতে অগ্রগতি বাড়াতে চায় সরকার। এজন্য চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ ৫০ হাজার হেক্টর বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। মন্ত্রী বলেন, বন্যাসহ নানা কারণে এ বছর আমনের উৎপাদন ভাল না হওয়ায় ধানের দাম খুব বেশি। যেটি নিয়ে খুব চিন্তার মধ্যে রয়েছি। সেজন্য, যে কোন মূল্যে আমাদের আগামী মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বোরোর চাষযোগ্য কোন জমি যাতে খালি না থাকে সে ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ দিতে হবে। বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মাঠ থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সকল কর্মকর্তাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং কৃষকের পাশে থাকতে জোরদেন কৃষি সংশ্লিষ্টদের। কৃৃষিমন্ত্রী রবিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায় সভায় এ কথা বলেন। মন্ত্রী আরো বলেন, এবছর ধানের ভাল দাম পাওয়ায় চাষি-কৃষকেরা খুশি ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় আছে। অন্যদিকে, আমরা কৃষকদেরকে যে বোরো ধানের উন্নত বীজ সরবরাহ করছি, সার, সেচসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় যে প্রণোদনা দিচ্ছি তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
চলতি মৌসুমে শুধু সাতক্ষীরা জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার কৃষকদের মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, গত মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৭৫হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছিল। এ হিসেবে এবার জেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ৫শ হেক্টর, কলারোয়ায় ১৪ হাজার হেক্টর, তালায় ২ হাজার হেক্টর, দেবহাটায় ৬ হাজার হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৫শ হেক্টর, আশাশুনিতে ৮ হাজার হেক্টর ও শ্যামনগরে ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা জানান, এখন বীজতলা তৈরির কাজ চলছে। এবার বীজতলা তৈরিতে উফশী জাত ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্র্রি-২৮, এসএল ৮ ব্রি-ধান ৫৫, ৪৭, ৫০ জামাইবাবু ও শুভ্র। চলতি বোরো মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ২শ মে:টন হাইব্রীড ও উফশী ধান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন ফসলের প্রায় ১১২টি আধুনিক জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তালমিলিয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মানসম্মত কৃষি গবেষণার কোন বিকল্প নেই। কৃষি গবেষণাকে আরো যুগোপযোগী করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আরো বেশি সংবেদনশীল করতে হবে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চত করার লক্ষ্যে কৃষি নীতিতে নতুন করে ন্যানো প্রযুক্তির মত আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। এছাড়া কৃষি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা, গবেষণা ও উন্নয়ন, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষিতে সমবায়, কৃষি বিপণন, বিশেষায়িত কৃষি যেমন: ছাদে কৃষি, হাইড্রোফোনিক, সংরক্ষণমূলক কৃষি, ভাসমান কৃষি, প্রিসিশন কৃষি ইত্যাদিও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া প্রাকৃৃতিক সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ, শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীল টেকসই কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার। কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব সাফল্য আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে-উৎপাদন বাড়িয়ে সে ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কৃষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি উপ পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, বোরো আবাদারে লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে কৃষদের পাশে আছে জেলা কৃষি বিভাগ। তারা বীজ তলা তৈরি,চাষাবাদ,সারও বীজের প্রণোদনা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা করে সমস্যা কাটিয়ে জেলার চাষিরা বোরো আবাদের বিপ্লব ঘটাবে।

Check Also

বড়দল সেন্ট জেভিয়ার্স চার্চের প্রধান ফাদার বাবুল বৈরাগীর সাথে জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনে।।বুধবার(২৫ ডিসেম্বর) ক্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা-৩ আসনের এমপি প্রার্থী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।