ক্রাইমবাতা ডেস্করির্পোট: বিশ্বব্যাপী জঙ্গিগোষ্ঠীর অনলাইন তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে মুখে ও মাথায় কাপড় বাঁধা ৯ যুবকের ছবি প্রকাশ করেছিল ২০১৯ সালের ২ নভেম্বর। জঙ্গলঘেরা একটি এলাকায় পেছনে আইএসের পতাকা রেখে ছবি তুলেছিলেন ওই ৯ জন। সাইট ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে এই ছবিসহ কয়েকটি তথ্য (ইংরেজি ভাষায়) প্রকাশ করা হয়েছিল। এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘বাংলাদেশের আইএস যোদ্ধারা নতুন গ্রুপ খলিফা আবু ইব্রাহিমের বায়েত নিয়েছেন।’
অবশ্য যুবকদের নাম-পরিচয় ছবিতে উল্লেখ ছিল না। তবে পুলিশের তদন্তে তাঁদের পরিচয় বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, ছবি প্রকাশের চার মাসের মাথায় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই যুবকদের পরিকল্পনাতেই চট্টগ্রাম শহরের ২ নম্বর গেট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দূরনিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেদিন বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস প্রথমে তাদের অনলাইন চ্যানেল বা সাইটে বাংলাদেশের ওই যুবকদের ছবি প্রকাশ করেছিল, যা পরে সাইট ইন্টেলিজেন্স তাদের সাইটে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের তৎপরতার কথা বরাবরই নাকচ করে আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে যেসব হামলা ও হত্যার ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকারের খবর বেরিয়েছে, সেগুলোতেও দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী নব্য জেএমবি জড়িত বলে পুলিশের এটিইউ ও সিটিটিসি বলে আসছে। আর র্যাব এই গোষ্ঠীকে ‘সারোয়ার-তামিম গ্রুপ’ হিসেবে উল্লেখ করে আসছে।
বিজ্ঞাপন
আইএসের পতাকা পেছনে রেখে মুখে ও মাথায় কাপড় বাঁধা অবস্থায় ৯ যুবকের একটি ছবি গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশ করা হয়
এটিইউ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার নোমান খান এই গ্রুপের আমির। বান্দরবান সরকারি কলেজে তিনি পড়াশোনা করেছেন। এরপর সাতকানিয়ার একটি মাদ্রাসায় ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে পড়াতেন। গ্রেপ্তার জহির সংগঠনের দাওয়াতি শাখার প্রধান। পলাতক থাকা তিনজনের মধ্যে সেলিম সামরিক শাখার প্রধান। জহির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিনি লোহাগাড়ার ফরিয়াদির কুলে (আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশের গ্রাম) যান। পাহাড়ের মধ্যে গাছে আরবি লেখা কালো পতাকা বেঁধে সেলিম বায়েত করান। পরে সবাই একসঙ্গে ছবি তোলেন। তিনি নিজেই সবার ছবি তোলেন। পরে সেলিমকে ছবি দিয়ে দেন। পরে সেলিম টেলিগ্রাম অ্যাপসে ‘বড় ভাইদের’ সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
তবে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, জহিরও ছবিতে ছিলেন। কিন্তু তিনি স্বীকার না করায় ছবিতে তাঁর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ছবিসহ সাইট ইন্টেলিজেন্সের ওই খবরে বলা হয়েছিল, নতুন খলিফা আবু ইব্রাহিমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী ‘সিনাই প্রদেশের যোদ্ধাদের’ ছবি বিতরণের কিছুক্ষণ পরই ইসলামিক স্টেট আরও বেশ কিছু ছবি বিতরণ করেছে, যেখানে বাংলাদেশি যোদ্ধারা তাদের আনুগত্য প্রকাশ করছেন। তবে সিনাই প্রদেশের ওই যোদ্ধারা অস্ত্র দেখালেও বাংলাদেশি যোদ্ধারা কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেননি।
এটিইউর পুলিশ সুপার (অভিযান) ছানোয়ার হোসেন বলেন, নোমান ও কাইয়ুম নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন তাঁরা। এর মধ্যে নোমান সাইট ইন্টেলিজেন্সে প্রকাশিত ছবিতে থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। তাঁর কাছ থেকে অন্যদের পরিচয়ও জানা গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।