ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার প্রাণ সায়র খালের প্রাণ ফিরে পেলে স্বস্থি মিলবে পাঁচ লক্ষ মানুষের। হ্রাস পবে শহরের জলাবদ্ধতা। বন্ধ হবে খালের দুই তীর জবরদখল করে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতি স্থাপন। উৎপাদন বাড়বে কৃষি ও শিল্পের। জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা-পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন,যানজট নিরসন ও শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এমনটায় আশা করছেন প্রাণ সায়র খালের তীরবর্তি কয়েক লক্ষ মানুষ।
সূত্র জানায় সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে খাল এবং জলাশয় পুনঃ খনন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় প্রাণ-সায়ের খাল খনন করা হচ্ছে। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলো মিটার খাল খনন করার কথা থাকলেও খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাদা-পানি না শুকিয়েই খনন করা হচ্ছে অনেক জায়গাতে।
১৮৬৫ সালে অবিভক্ত বাংলার সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পিএন হাইস্কুল এন্ড কলেজ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধার্থে প্রাণসায়ের খাল খনন করেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গি বেতনা নদী থেকে সাতক্ষীরা শহর হয়ে এল্লারচর মরিচ্চাপ নদী পর্যন্ত এ খালের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। প্রথমাবস্থায় এ খালের চওড়া ছিল ২০০ ফুটের বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সে সময় বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকা এসে ভিড় জমাতো এ খালে। এর ফলে সাতক্ষীরা শহর ক্রমশ সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত হয়। আর ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকে প্রাধন্য না দিয়ে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণের নামে খালের দুই প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এতে খালে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি বদ্ধ খালে পরিণত হয়। এরপর জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর খালটি খনন করা হয়। ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ১০ কিলোমিটার খাল সংস্কারে নামমাত্র খনন করে প্রকল্পের সিংহভাগ টাকাই লোপাট করার অভিযোগ উঠে। খাল খননের নামে খালের দুই ধারে শতশত গাছ কেটে ফেলা হয়।
আবারো নেমে আসে শহর বাসীর দুর্ভোগ। শীতকালেও শহরে জলাবদ্ধা বিরাজ করে। বন্ধ হয়ে যায় খালের পানি প্রবাহ।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীন ‘৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃ খনন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় প্রাণ-সায়ের খাল খনন করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ হতে খেজুরডাঙ্গা ৬ ভেন্ট স্লুইস গেটস্থ বেতনা নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা চুক্তি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ৯৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৯ দশমিক ৯০ সিএফটি। আর দ্বিতীয় অংশে ১ দশমিক ০৮০ কিলোমিটারে রয়েছে খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে খেজুরডাঙ্গা ৬ (ছয়) ভেন্ট স্লুইস গেট পর্যন্ত।
এ অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৮ দশমিক ৬৯ সিএফটি। অপর গ্রপে চরবালিথা হতে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পুনঃ খননের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ৭ কোটি ৪৮ দশমিক ৪১ লক্ষ টাকা চুক্তি মূল্যে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ১ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ দশমিক ৩৫ সিএফটি। টেন্ডার অনুযায়ী খালটির ডিজাইন দুই ভাগে বিভক্ত। যার প্রথম অংশে চরবালিথা হতে কুখরালী দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ পর্যন্ত খনন করা হবে।
এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ৮৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৪৯ সিএফটি। আর দ্বিতীয় অংশে কুখরালী দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ হতে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত। এই অংশে খননকৃত মাটির পরিমাণ ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৮ দশমিক ৮৬ সিএফটি। এই অংশের ইটাগাছা পূর্বপাড়া হতে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত খননকৃত ৪৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪৬ দশমিক ১৬ সিএফটি মাটি ড্রাম ট্রাকের মাধ্যমে শহরের মধ্য থেকে নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর করা হবে।
নাগরিক কমিটির নেতা অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। খালটি খননপূর্বক সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানান তিনি।
খননকৃত অংশের পানি সেচ দিয়ে তলদেশ শুকিয়ে ফেলা এবং খননকৃত মাটি দুই পাড় থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলেও তা যথা নিয়মে হচ্ছে না বলে এলাকা বাসির অভিযোগ।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, প্রাণ সায়ের খাল খননে কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কারণ প্রাণ সায়ের খাল নিয়ে সাতক্ষীরাবাসীর একটি স্বপ্ন আছে। ডিজাইন অনুযায়ী খাল খনন করতে হবে। তিনি আরো জানান, খাল পুনঃখনন কাজ তদারবি করার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।