রাজধানী ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে কোনো রাস্তায় একদিনের জন্য গাড়ি ও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটলে কী ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়, তা সংশ্লিষ্টদের জানা থাকলেও বাস্তবে লক্ষ করা যায়, নগরীর ব্যস্ততম রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর সময়মতো তা মেরামত করা হয় না।
কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলাকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করবে, এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন কাজের কারণে ঢাকার প্রায় ৩০ শতাংশ সড়ক এখন ক্ষতবিক্ষত। কাজে সমন্বয় না থাকায় দুর্ভোগে নাকাল নগরবাসী। ঢাকার দুই নগরপিতা বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন।
এমন অবস্থায় সেবা সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব এক ছাতার নিচে না আসা পর্যন্ত বিদ্যমান সমস্যার সমাধান দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, ডেসকো, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটির উন্নয়ন কাজের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার দায়িত্ব বর্তায়। এ ক্ষেত্রে সড়ক ভেঙে গেলে যথাসময়ে সংস্কার করা এবং অন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে তা সমাধান করার কথা সংশ্লিষ্টদের।
কিন্তু বাস্তবে লক্ষ করা যায়, খোঁড়াখুঁড়ির সময় সড়কের এক বড় অংশে ফেলে রাখা হয় মাটি, ইটসহ বিভিন্ন সামগ্রী। দীর্ঘ সময় পরও সেসব সরানো হয় না।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে নিয়োজিত সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পারে। জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস অক্টোবর মাসে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে চিঠি দিয়েছিলেন।
কিন্তু নির্ধারিত সময় ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অনেক সেবা সংস্থা কর্মপরিকল্পনা জমা দেয়নি। সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কেন নির্ধারিত সময়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে ব্যর্থ হল, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন এমন গড়িমসি না করে, সেটা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। জানা গেছে, এবার বর্ষা মৌসুমেও অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে উন্নয়ন কাজের কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ সড়ক ক্ষতবিক্ষত। করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ থাকা উন্নয়ন কাজগুলো নতুন করে শুরু হওয়ায় রুটিন কাজের পরিমাণ বেড়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সেবা সংস্থাগুলোর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থের সংস্থান ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হওয়ায় যখন-তখন খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমরা দুই মেয়র আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ উন্নয়ন কাজের কারণে অনেক ধুলাবালু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বিধি মোতাবেক যারা উন্নয়ন কাজ করবে-ধুলা নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তারা তা করছেন না। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সেবা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের কারণে রাজধানীবাসীর যাতে কোনো রকম দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে-এটাই প্রত্যাশা।