উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি ৮০ ভাগ: সাতক্ষীরায় ৫ বছরের সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ

আবু সাইদ বিশ্বাসঃ  ক্রাইমবাতা রিপোট:   চাহিদার তুলনায় দেশজ উৎপাদন কম হওয়ায় দেশে ভোজ্যতেলের ঘাটতি বাড়ছে। মাথাপিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম হারে ভোজ্যতেল চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন মাত্র ২০ ভাগ। ফলে প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে প্রতি বছর দেশে শতকরা ৮০ ভাগ ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। ২০১৮ সালে দেশে ৪৬.২১ লক্ষ টন ভোজ্যতেল আমদানিতে ২৭.৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার। ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশ হতে ভোজ্যতেল আমদানি কমাতে চলতি মৌসুমে দেশে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে গত পাঁচ বছরে এর আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরো (বিবিএস) এর তথ্যে দেখা যায় গত ২০১৮ সালে দেশে ৪৬.২১ লক্ষ টন ভোজ্যতেল আমদানিতে ২৭.৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কর হয়েছে, যদিও আমদানিকৃত তেলের বড় একটি অংশ শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ফলে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওযায় বিগত কয়েক বছরে এই আমদানিহার পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু দৈনিক ৪০ গ্রাম হারে ভোজ্যতেল প্রয়োজন হলে ২০২১ সালে দেশে ভোজ্যতেলের মোটচাহিদা হবে প্রায় ২৫.০ লক্ষ মেট্রিক টন।
দেশে ভোজ্যতেলের মূল উৎস হলো সরিষা এবং সামান্য পরিমাণে সূর্যমুখী, সয়াবিন ও তিল এবং রাইস ব্রান যা থেকে সর্বমোট ৫.০ লক্ষ টনের কাছাকাছি ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। এ হিসেবে দেখা যাচ্ছে দেশের প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের ঘাটতি থাকে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ। দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪.০ শতাংশ তেলফসল আবাদে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয় ।
সরিষার তেলের ব্যবহার বাড়ায় সাতক্ষীরায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন হলুদের ঢেউ। দৃষ্টি যতদূর যায়, শুধুই হলুদের সমারোহ। সরিষা ফুলের এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য মন কাড়ে সকলের। চারিদিকে এখন শুধু হলুদ সরিষা ফুলের বর্ণিল সমারোহ। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ। এক সময়ের সবুজ মাঠ হয়ে উঠেছে হলুদের সমারোহ। সরিষার ক্ষেত পরিচর্যায় চাষিরা এখন ব্যস্ততার মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। গত বছর জেলায় সরিষা চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় এ বছর কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে অল্প সেচ, কম পরিচর্যা খরচ এবং সরিষা উত্তোলনের পর পূনরায় সেই জমিতে বোরো ধান চাষের সুযোগ থাকার কারণে কৃষকদের মধ্যে সরিষা চাষের আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাঘ মাসের শেষ দিকে ও ফাল্গুনের শুরুতে ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হবে। জানা গেছে, প্রধান ফসল বোরো ধান চাষের আগে রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরিষার চাষের পরই বোরো ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও সরিষা চাষের পর ওই জমির উর্বরতা শক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং জমির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি সরিষার ফলন ১.৩৫ মে:টন হওয়ার সম্ভবনা দেখছে সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে জেলায় ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৮ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। আর চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্দ্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৫ মে:টন। চলতি ২০২০-২১ রবি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে, কলারোয়া উপজেলায় ৫ হজার ৫১০ হেক্টর জমিতে, তালা উপজেলায় ৪৬০ হেক্টর জমিতে, দেবহাটা উপজেলায় ১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে, আশাশুনি উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে ও শ্যামনগর উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। শূন্য চাষ পদ্ধতির মাধমে সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। শূন্য চাষ পদ্ধতিতে সরিষা আবাদে সুষম মাত্রার সার প্রয়োগের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধিসহ সরিষার দেশীয় মোট উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গ্রাম বাংলার রাস্তার ধারে কিংবা ফসলের মাঠ এখন সবুজের মাঝে চোখ ধাঁধানো হলুদ সরষে ফুল। মাঠের পর মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের দৃষ্টি নন্দন মনোরম এক দৃশ্য। সরষের ফুল আকৃষ্ট করছে মৌমাছি সহ প্রকৃতি প্রেমীদের। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষার ক্ষেত। মৌ চাষিরা মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে চলতি মওসুমে এই অঞ্চলে লাভজনক মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মৌচাষীরা জানিয়েছেন।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি জানান, সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপন করার ফলে পরাগায়ন হয় অনেক বেশি। এতে করে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫-৩০ শতাংশ উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবছর সরিষা চাষে চাষীরা লাববান হবে। সে জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হচ্ছে এবং আড়াই লক্ষ টন তেল পাওয়ার সম্ভবনা। যে কারণে ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে সরিষা চাষের উপর গুরুত্বারো করা হচ্ছে। চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সহযোগীতা করা হচ্ছে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।