নদ-নদী দখল মুক্ত রাখতে দরকার কার্যকর পদক্ষেপ:
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: স্থায়ীজলাবদ্ধতার কবলে পড়তে যাচ্ছে সাতক্ষীরা। জেলার কপোতাক্ষ ও বেতনা অঞ্চল এখনো পানির তলে। একই অবস্থ জেলার নিন্ম অঞ্চল। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কাজ কর্ম না থাকায় কর্মহীনের সংখ্যা বাড়ছে। একদিকে প্রতি বছর এসব অঞ্চলে আশ্বিণ কার্তিক মাসে মান্দা থাকে। তার পর নতুন করে ঘূণিঝড় আম্পান আশাশুনি ও শ্যামনগর অঞ্চলে লাখ মানুষকে করেছে নিঃস্ব। এতে নিন্ম আয়ের মানুষেরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। সূত্রমতে গতকয়েক বছর ধরে জেলাতে অনাবাদি জমির সংখ্যা কমছে না। জেলা কৃষিবিভাগের মতে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলাতে অনাবাদি জমির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪৬ হাজার ২৬ হেক্টর। বিগত ৫ বছরে আবাদ হয়নি এমন জমির পরিমাণ জেলাতে ৪৫ হাজার ১১০ হেক্টর। ব্যবহার না করতে পারায় পানির নিচে অনাবাদ যোগ্য জমি রয়ে গেছে ৬২ হাজার ৪৯৪ হেক্টর। এছাড়া নদ-নদীর প্রবাহ বন্ধ করে বাড়িঘর তৈরি,মিলকারখানা স্থাপন,হাটবাজার এবং অবকাঠামো নির্মাণ করতে এক লক্ষ ৪১ হাজার ৪২২ হেক্টর জমি ব্যবহার হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান নির্মানের সময় সরকারী নিয়ম কানুন না মানায় পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে দিনের পর দিন বসবাসের অনুপযোগী হচ্ছে উপকূলীয় জেলাটি।
এসব এলাকার অন্তত কয়েক হাজার মানুষের বাড়ির উঠানে থৈ থৈ করছে পানি। ভুক্তভোগীরা রাস্তা থেকে ঘরের দরজা পর্যন্ত যেতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। প্রতিটি বাড়িতেই উঠানের ওপর বাশের সাঁকো। এসব এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষ এখনো পানিতে ভাসছে। লাবসা, ঝাউডাঙ্গা ও বল্লী ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার কারণে শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবোর) খামখেয়ালিপনার কারণে অপরিকল্পিত এ খালের একাংশ খনন করায় এবং অপর অংশে খনন সম্পন্ন না করায় পানি বের হতে পারছে না।
এছাড়া জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে কার্যক্রম থমকে গেছে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীর। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পেরুলেও এখনো তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই শিল্প নগরীতে। এছাড়া নতুন করে পানিতে তলিয়ে আছে শিল্প নগরীটি। ফলে জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা, যাতায়াতের অসুবিধা, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবসহ নানামুখী সংকটে জর্জরিত সাতক্ষীরার এই শিল্প নগরী। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো। বিসিকের নির্দিষ্ট পানির প্লান্ট থাকা সত্তেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি না সরলে হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি কারণে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর নাব্যতা হ্রাস পলিপড়ে নদীর তলদেশ ভরাট, অকেজো স্লুইস গেট ও খননের নামে চরম দুর্ণিতীর কারণে চলতি মৌসুমে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অস্তিত্ব সংকটে জেলার ৪২৯টি খাল। এসব এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টি স্লুুইস গেটের বেশির ভাগ অকেজো। ২৭টি নদীর ১৩ টি পলিপড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এসব নদী থেকে প্রবাহিত চার শতাধিক খাল তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দর্শকে এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টিস্লুুইস গেটের মেয়াদ প্রায় শেষ। ফলে দিনের পর দিন জেলাতে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিতে পারে এসব অঞ্চলে অশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
তবে আশার কথাহলো জেলার জলাবদ্ধতা নিরাশনে সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কপতাক্ষ ও বেতনাসহ কয়েকটি নদনদী খনন। শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খাল খনন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা নিরাশনে স্থায়ী পক্ষক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সদরের কয়েকটি ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা বন্ধে প্রাণ সার্য়ে খাল খনন বন্ধ রাখা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাণ সায়ের খাল খনন করে শহর বাসির কষ্ট লাঘব করা হবে।
সাতক্ষীরা ০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি’র জানান, তার প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরার স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী ও খাল খননের জন্য একনেকে ৪শ’ ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে সাতক্ষীরার নদ-নদী তার প্রবাহ ফিরে পাবে এবং সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা শতভাগ নিরসন হবে।
তবে নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, নদী খনন করে নাব্যতা আনার পাশাপাশি নদীখেকো ও দখলদাররা যাতে আবারও নতুন করে দখল করতে না পারে সে লক্ষ্যে তদারকির কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
Check Also
সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …