খলিল : আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৪৯ বছর পেরিয়ে এবার ৫০তম বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস সশস্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
মহান বিজয় দিবস ঊপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ রাজনীতিবিদরা। তারা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে,। তবে কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে না। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্র সমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াালি ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি :
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। ১০টায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ৯টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক টুঙ্গিপাড়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম অংশগ্রহণ করবেন।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির কর্মসূচী :
মহান বিজয়দিবস উপলক্ষে একগুচ্ছ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। মঙ্গলবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসিচব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আজ ভোরে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এসময় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী বিএনপির কার্যালয়গুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজয় দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান সম্মানিত সদস্যদের যথাসময়ে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাংলা একাডেমি মহান বিজয় দিবস ২০২০ উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে মুক্তিযুদ্ধের শহিদ স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। ১৭ই ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল ১১.০০টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মরণ-অনুষ্ঠানে আলোচনা করবেন ডা. সারওয়ার আলী এবং সুব্রত বড়ুয়া। সকাল ১১:৪৫টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করবেন অসীম কুমার উকিল এমপি এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস-২০২০ উপলক্ষ্যে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ :
বিজয় দিবস উদযাপনে স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে গণপূর্ত বিভাগের কর্মীদের টানা কয়েকদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে নতুন রূপ ধারণ করেছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। শেষ করা হয়েছে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা ও শোভা বর্ধনের কাজ।
গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতার জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এবার স্মৃতিসৌধকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। শেষ হয়েছে ধোয়ামোছা, সাফসুতর ও রংতুলির কাজ। স্মৃতিসৌধের মূল ফটক থেকে সৌধ স্তম্ভ পর্যন্ত ইটেরগাথুনিগুলোতে দেওয়া হয়েছে লাল-সাদা রঙয়ের আঁচড়। পায়েহাঁটার পথগুলোর দুই পাশে বসানো হয়েছে লাল টকটকে ফুল গাছের টব। লাল-সবুজের আভায় সেজেছে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা।
ঢাকার জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে এই স্মৃতিসৌধের শিলান্যাস করেন। পরবর্তীতে ১০৮ একর জায়গা নিয়ে লেক ও বৃক্ষরাজি পরিপূর্ণ একটি সবুজ বলয়ের মধ্যে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ও দশটি গণসমাধিসহ বেশকিছু স্থাপনা।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …