বিজয় দিবসের জামা

-জহির টিয়া
নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে চোখ মেলে কনিকা বলল, বাবা আমাকে বিজয় দিবসের একটা জামা বানিয়ে দাও। আমি বিজয় দিবসে ওটা পরে স্কুলে যাবো। বাবা জিনাত সাহেব বললেন, বিজয় দিবসের জামা আবার কেমনে বানাবো মা? কনিকা বলল, বাবা তুমি তো দেখছি বোকাই থেকে গেলে। কেমনে বানাতে হয় জানো না? তাহলে বলছি শোনো, তুমি আজকেই বাজার হতে টকটকে লাল ও গাঢ় সবুজ রঙের কাপড় কিনে আনবে। তা দিয়ে রিনা আন্টির কাছে জামা বানিয়ে নিবো। এরপর দৌড়ে পড়ার টেবিল হতে খাতা ও কলম এনে বাবার সামনে বসে পড়ে কনিকা। তারপর জামার ডিজাইন এঁকে দেখাতে লাগল। জামার সামনের দিকে বৃত্ত এঁকে কনিকা বলল, বাবা এই বৃত্তটা লাল কাপড় দিয়ে হবে আর বাকিটা সবুজ রঙের হবে। পেছনের দিকটাও একই হবে। অর্থাৎ লাল-সবুজের পতাকার মতো জামাটা হবে। এবার বুঝেছ বাবা? মেয়ের কথা শুনে জিনাত সাহেব মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, হ্যাঁ বুঝেছি মা। ছোট্ট মেয়েটার ভেতর এমন দেশপ্রেম দেখে, মনে মনে গর্বিত হন তিনি। আর ভাবেন, মেয়েটাকে মনের মতো করে মানুষ করতে। মেয়েকে পরীক্ষা করার জন্য জিনাত সাহেব জানতে চাইলেন, আচ্ছা মা বিজয় দিবসটা কী? তুমি কি জানো?
আচ্ছা বাবা, তুমি তো দেখছি সত্যি সত্যিই বোকা। বিজয় দিবস সম্পর্কে কিছুই জানো না! শোনো তবে, আমাদের সুন্দর দেশটাকে শাসন করত পশ্চিম পাকিস্তানিরা। অনেক জুলুম-অত্যাচার করত। তাই এদেশের জনতা প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। আর এতে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ। ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে এদেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে এদেশ শত্রুমুক্ত হয় ১৬ই ডিসেম্বর। এর ফলে যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি। সেই থেকে ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। এবার বুঝেছ বাবা?
মেয়েকে বুকে টেনে জল ছলছল নয়নে জিনাত সাহেব বললেন, হ্যাঁ বুঝেছি মা। এই যুদ্ধেই তোমার দাদু শহীদ হন। কিন্তু এতো কিছু কিভাবে জানলে মা?
বাবার চোখে চোখ রেখে কনিকা বলল, আজকে ক্লাশে আমাদের রিক্তা ম্যাডাম মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সব কথা বলেছেন। আর যুদ্ধে জয় লাভ করে পেয়েছি আমাদের লাল-সবুজের প্রাণের পতাকা। তাই আমার মনে হয়েছে আমিও বিজয় দিবসে লাল-সবুজের জামা বানাবো। জিনাত সাহেব মেয়েকে আদর করতে করতে বললেন, নিশ্চয় মা, তোমাকে বানিয়ে দিবো।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।