হেফাজতের তিন নেতার অর্থের উৎসের তদন্তে গোয়েন্দা সংস্থা

  • আয়কর দেন কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

ক্রাইমবাতা ডেস্করিপোট: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হেফাজতের তিন নেতার আরাম আয়েশের বিলাসী জীবনযাপনের অর্জিত অর্থ সম্পদের উৎস সম্পর্কে গোপনে তদন্ত করছে অন্তত তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা।  অর্থের যোগানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তদন্ত হচ্ছে হেফজাতের তিন নেতার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর-এর গোয়েন্দা সংস্থা-সিআইসি ও বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। হেফাজতে ইসলামের যে তিন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে তারা হলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। হেফাজতের তিন নেতা বিলাসী জীবনযাপন করলেও তারা সরকারকে কোন বৈধ আয়ের কর দেন কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী ফতোয়া দেয়ার পেছনে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি কাজ করছে যারা বিপুল অঙ্কের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করেছে।  দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি অর্থের যোগান দিয়েছে এবং এই অর্থের যোগান দেয়ার পরই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধী ফতোয়া দিয়ে সারাদেশে উত্তেজনার সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাস্কর্য বিরোধী ফতোয়া দিয়ে সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে উত্তেজিত করার জন্য ব্যবহার করেছেন ফেসবুক, ইউটিউব। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে ভাস্কর্য বিরোধী বক্তব্য রেখেছে ও ভাস্কর্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বক্তব্য শুনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুর করেছেন কুষ্টিয়ার মাদ্রাসার দুই ছাত্র মিঠুন ও নাহিদ। পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-০৩ এর বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে দোষ স্বীকার করে এ জবানবন্দী দেন তারা। একই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর চারজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতে ইসলামের তিন নেতা ভাস্কর্য বিরোধী ফতোয়া দিয়ে সারাদেশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনার কঠোর হস্তে পরিস্থিতি মোকাবেলার উদ্যোগ নেয় সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপক তৎপরতা চালায়। ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত সৃষ্টির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি মাঠে নেমে প্রতিবাদ সমাবেশ করে হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানায়। হেফাজতের তিন নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে যা তদন্তনাধীন। এর মধ্যেই গোপনে হেফাজত তিন নেতার বিলাসী জীবনযাপনের নেপথ্যে অর্থ সম্পদের উৎসের সন্ধানে নেমেছে অন্তত তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুক, ইউটিউব, লাইভে এসে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ছবি তোলা, ফেসবুকে ছবি শেয়ার করা, ভিডিও শেয়ার করে চলেছেন হেফাজতের তিন নেতাসহ অনেক ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ। ভাস্কর্য নিয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন, সমালোচনা করছেন অথচ সেই সমালোচনা করতে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন ফেসবুক বা ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত সংস্থাগুলোর নজরে আসার পর সংরক্ষণে এনেছে। তবে এসব আলোচনা ছাপিয়ে সামনে এসেছে আরেকটি বিষয়। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজতের পেছনে অন্য কোন শক্তি কাজ করছে। তারা নেপথ্যে থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ এবং আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আর সেই আর্থিক সহায়তা নিয়ে ভাস্কর্য বিরোধীরা আরাম আয়েশি জীবনযাপন করছেন। ভোগ-বিলাসে রিতিমতো নিমজ্জিত হেফাজতের নেতারা। অথচ বৈধ আয়ে অর্জিত অর্থেরও ট্যাক্স (কর) দিতে হয়। তাদের অর্জিত অর্থ সম্পদের পরিমাণ সরকারকে দেয় করের পরিমাণ রয়েছে কিনা এবং কিভাবে বিলাসী জীবনযাপন করে যাচ্ছেন তারজন্য তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে যেখানে তারা দামী খাবার, আরামে আয়েশে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন। এসব ছবি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় চলছে। ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মের নামে অপপ্রচার করে যে ধর্মপ্রাণ মানুষজনকে বিভ্রান্ত করছেন তারাই অভিযোগ করতে শুরু করেছেন, যেখানে বড় আলেম, ওলামা মাশায়েক, আউলিয়া, হুজুরবর্গ সাদামাটা জীবনযাপন করছেন সেখানে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের আরাম আয়েশে বিলাসী জীবনযাপনের পেছনের অর্থর উৎস কী? অর্জিত অর্থের জন্য সরকারকে যেভাবে মানুষজন কর দেয় সেভাবে তাদের অর্জিত অর্থ সম্পদের দেয় কর পরিশোধ করেন কিনা?

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।