বিএনপি ঠিক করেনি। ১১ অভিযোগের জবাব দিলেন মেজর হাফিজ

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ‘সরকার পরিবর্তন আন্দোলন’র সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাওয়া কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিসের জবাব দিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

শনিবার বেলা ১১টায় বনানীর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে শোকজের জবাব দেন তিনি। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

লিখিত বক্তব্যে যে ১১ অভিযোগের জবাব দিয়েছেন মেজর হাফিজ তা হুবহু তুলে ধরা হালো-

১. আমাকে কখনও বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

২. জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার (প্রস্তাব) অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর ২ মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা ৪ এর অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা।

৩. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের পূর্বেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করে, এ কারণেই বরিশালে যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত দশ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।

৪.৫.৬. বর্ণিত দলীয় সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত স্মরণীয় দিবসগুলোতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজন বোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কোণঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে।

বিগত এক বছরে আমি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ৬টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি, আয়োজক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ২টি,  বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ২টি, বিএনপি ঘরানাভুক্ত সংগঠন ১টি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এসব সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

অসৎ উদ্দেশ্যে আমি বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছি, এটি একেবারেই অসত্য, ঢালাও মন্তব্য।

গত ১২ ডিসেম্বর প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেবার জন্য দাবি জানিয়েছি। সাম্প্রতিককালে আমার দেয়া নিম্ন লিখিত ৪টি বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে:

(ক) জনগণ মনে করে, যে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল সেটি বর্জন করেছে এবং যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিরর্থক সেটিতে অংশ নিয়ে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারকে বৈধ্যতা দিয়েছে।

(খ) ২০১৮ সালের মিডনাইট ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর মাত্র পাচঁটি আসনে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় এমপিদের সংসদের অধিবেশনে যোগ দেয়া উচিত হয়নি।

(গ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুবছর ধরে কারাগারে অন্তরীণ, অথচ আমরা বিএনপি নেতারা, ছাত্রদল, যুবদল তার মুক্তির জন্য কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি।

(ঘ) বিএনপি ও আওয়ামীলীগ এ দুটি প্রধান দলে গণতন্ত্রের চর্চা নেই।

এসব বক্তব্যে দলীয় সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সম্পর্কে কোনো মিথ্যা কিংবা অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করিনি বরং আত্মসমালোচনা করেছি।

৭. প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আমি দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলা বিরোধী কোনো বক্তব্য দিইনি। সব প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। এখানে আমাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রায়ই বিকৃত এবং খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়। আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনও কারো বিরুদ্ধে এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি।

অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেক বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। সরকারঘনিষ্ঠ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মালিকানাধীন ইত্তেফাক পত্রিকায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম এবং আমার বরাত দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত বক্তব্য প্রকাশ করা হয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মেজর হাফিজের বক্তব্যে নেগেটিভ কিছু নেই। ওই পত্রিকার কাটিংটি আবারও পড়ে দেখার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কখনোই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান সম্পর্কে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখিনি। এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ এনে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করি।

৮. ১৩ বছর আগের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমি একজন নগন্য রাজনৈতিক কর্মী, নিজেকে মহাসচিব ঘোষণা করেছি এটি একটি হাস্যকর বক্তব্য। প্রকৃত ঘটনা সবাই জানে। ২৯ অক্টোবর ক্ষমতার করিডোরে অবস্থানকারী সেনা কর্মকর্তারা স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে জোরপূর্বক সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বাসায় নিয়ে যায়। গভীর রাতে সেখানে অনুষ্ঠিত সভায় সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমাকে অস্থায়ী মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না, পরদিন বিষয়টি আমাকে জানানো হয়।

সেনা সদস্যরা কয়েকদিন পরই আবদুল মান্নান ভুঁইয়াকে জেলে ঢোকায় এবং সাইফুর রহমান গোপনে দেশত্যাগ করেন। সে সময় রাজনৈতিক অঙ্গণে অনেক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। নেতাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করা হয়। কারো কারো কাছ থেকে ভবিষ্যতে রাজনীতি করব না- মর্মে মুচলেকাও আদায় করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদেরকে সেনা সদস্যরা সম্মান করে। আমি এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পুনঃস্থাপিত করার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়। বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা আমি কখনও করিনি বরং দলকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করেছি। আমার অনুরোধে বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তারা বিএনপির ১০৫ জন এমপিকে ফেরদৌস কোরাইশীর নেতৃত্বাধীন কিংস পার্টিতে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। তারা আজও বিএনপিতে আছেন।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার আইনজীবী নওশাদ জমিরের মাধ্যমে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য আমার কাছে নির্দেশ পাঠান। সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার তার বাসভবনে আমাকে ও (প্রয়াত) মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে বৈঠকে উপস্থিত হবার জন্য অনুরোধ করেন।

আমি তাৎক্ষণিক উপস্থিত হই, কিন্তু দেলোয়ার সাহেব আসেননি। পরদিন আমি খোন্দকার দেলোয়ার সাহেবের সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকে মিলিত হই, রুহুল কবির রিজভী আমাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেখেছেন। পরের সপ্তাহে এমপি হোস্টেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানের বাসায় খোন্দকার দেলোয়ারের সঙ্গে দেড়ঘণ্টা ব্যাপী এক বৈঠকের পর আমাদের ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।
মহাসচিব আমাকে সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করে বিএনপিকে ক্ষমতায় নেবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া ও খোন্দকার দেলোয়ারের নেতৃত্বে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে বক্তব্য রাখি।

৯. খালেদা জিয়া কারামুক্ত হবার পর আমি তার সঙ্গে দেখা করি। জেলখানা থেকে পাঠানো তার সব নির্দেশ পালন করেছি জানালে তিনি আমার প্রতি সদয় আচরণ করেন। আমার কার্যক্রম পর্যালোচনা করেই তিনি আমাকে ২০০৮, ২০১০ এর উপনির্বাচন, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি এজন্য কৃতজ্ঞ। আবদুল মান্নান ভুঁইয়ার দলীয় সংস্কার প্রস্তাবকে বিএনপির ১০৫ জন এমপি সমর্থন দিয়েছেন। প্রবল ক্ষমতাদর্পী সেনা কর্মকর্তারা ভীতি প্রদর্শন ও অত্যাচার করে তাদেরকে সংস্কার প্রস্তাবে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছে। এদের মধ্যে মাত্র ৫ জনকে ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

১০. আমি কখনোই আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কোনো কর্মীকে নাজেহাল করিনি, দলীয় কার্যক্রমেও নিষ্ক্রিয় করে রাখিনি। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর কতিপয় বিএনপি কর্মী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপি কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি লালমোহন ও তজুমুদ্দিন থানায় দুজন নেতাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বহিষ্কার করে। এদের একজন রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষর জাল করে চিঠি ইস্যু করার কারণে বহিষ্কৃত হয়। এরা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিল। বিএনপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন, দল ক্ষমতাচ্যুত  হওয়ার পর আওয়ামী লীগে ফিরে যায়।

১১. আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি কোনো গ্রুপিং সৃষ্টি করিনি, গোপন গ্রুপিং থাকলেও সব নেতাকর্মী আমার প্রতি অনুগত রয়েছে। দলের মূল কমিটি এবং অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলো গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কাউন্সিলরদের ভোটে গঠন করা হয়েছে।

ভোলা জেলা বিএনপি কমিটিও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। আমার এলাকার আওয়ামী এমপি একজন বড় মাপের সন্ত্রাসী, নিজেই গুলি করে একজন যুবলীগ কর্মী হত্যায় অভিযুক্ত। তার অত্যাচারে বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের প্রধান নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া। অনেকেই আওয়ামী ক্যাডারদের আক্রমণে আহত হয়েছে। আমি তাদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং আইনজীবী নিয়োগ করে অব্যাহতভাবে আইনি সহায়তা দিয়ে আসছি।

কর্মীর মূল্যায়ন না করলে আমি কীভাবে পর পর ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি? পাকিস্তানি আমলে এ আসন থেকে আমার বাবা ডা. আজহার উদ্দিন আহমদও বিরোধী দলের প্রার্থী হয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমরা নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করার জন্য নয়, জনগণের কল্যাণ সাধনের জন্য রাজনীতি করি।

একটি উপজেলাকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছি এবং এলাকায় শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছি বিএনপি শাসনামলে। গ্রামীণ বাজার লালমোহনকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় রূপান্তরিত করেছি। আমি সরকারি সাহায্য ছাড়াই পাঁচটি কলেজ স্থাপন করেছি, যার চারটি আমার বাবা-মায়ের নামে ও ১টি আমার উপজেলার নামে।

আমি অনুরোধ জানাচ্ছি আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো নেতাকর্মী যদি আমার নামে অভিযোগ করে, তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। বিগত ১২ বছরে তাদের নামে কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হোক। কেন্দ্র থেকে পাঠানো একটি টিম এলাকায় গিয়ে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করলেই সত্য প্রকাশিত হবে।

পরিশেষে আমার মূল বক্তব্য, আমি বিএনপির সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে কোনো অসম্মানসূচক, অসৌজন্যমূলক বক্তব্য রাখিনি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সততা ও দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। আমি মুক্তিযুদ্ধে তার অধীনস্থ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি, সম্মুখ সমরে আহত হয়েছি।

১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে সারাদিন মরণপণ যুদ্ধের পর তার নেতৃত্বে সিলেট শহর দখল করেছিলাম। ২০২০ সালের এ দিনেই আমার দল আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আমাকে পাঠাবার আগেই চিঠির বিষয়বস্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমার অসংখ্য কর্মী মর্মাহত হয়েছে। এটি তো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়, গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

আমাদের দল বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। বিগত চার বছর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগই পাইনি। আজ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বিএনপির একজন নগন্য কর্মী হিসেবে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করতে চাই-

(ক) ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই দলের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা হোক।

(খ) দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মানোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্যের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে কাউন্সিল সভার রিপোর্ট পেশ করা হোক। ভবিষ্যতে সব নির্বাচনে দল থেকে একজনকে প্রার্থী এবং একজনকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হোক। এতে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কমে যাবে।

(গ) দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলো কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হোক।
সম্প্রতি আমার নির্বাচনী এলাকায় ছাত্রদলের কমিটি কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় বসে গঠন করেছেন, আহ্বায়ককেই আমি চিনি না। ছাত্রলীগের কর্মীরাও এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে। আমার সুপারিশকে বিবেচনা করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চিঠি দিয়ে কোনো উত্তর পাইনি। ২৯ বছর সার্ভিস দেয়ার পর চিঠির একটি উত্তর আশা করতেই পারি!

(ঘ) দলের কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হোক। তাহলেই সৎ, নির্লোভ, মহান নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মা শান্তি পাবে।

পরিশেষে বিনীত নিবেদন, আমি দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা নই, তবুও আমার ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার জন্য গত ছয় বছরে চার বার গ্রেফতার হয়েছি। আমাকে বাসা থেকে নয়, রাজপথ থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল।

২০১৪ সালে বিএনপির ঢাকা ঘেরাও কার্যক্রমে সন্ধ্যার পর গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকে না পাওয়ায় আমাকেই নেত্রীর নির্দেশে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়েছে। সেখানেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলাম। দুই মাস নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দী ছিলাম।

দেশনেত্রীকে যেদিন কারাগারে নেয়া হয় আদালত চত্বরে আইনজীবী ব্যতীত কেবলমাত্র তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। অথচ আজ আমার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বেগম জিয়া জনপ্রিয়তার শিখরে অবস্থানকারী সংগ্রামী নেত্রী, তাকে অসম্মান করার প্রশ্নই আসে না। জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যের প্রতি কখনোই কটূক্তি করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। রাজনীতি ছেড়ে দিলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ হৃদয়ে লালন করব।

আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকব। আমি দেশের বৃহৎ, জনপ্রিয় দলের বর্ষীয়ান সদস্য, কোনো মূক ও বধির স্কুলের ছাত্র নই। আমি বিএনপির অসংখ্য নির্যাতিত নেতাকর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং দেশনেত্রীর সুস্থতা ও কারামুক্তি কামনা করছি।

আমার বিনীত অনুরোধ আমার বক্তব্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করা হোক। বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমাকে যদি দোষী সাবস্ত্য করা হয় আমি যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি। আমি দলীয় নেতৃত্বের প্রতি সব সময়ই শ্রদ্ধা পোষণ করি।

প্রসঙ্গত,

বিএনপি, জামায়াত, ঐক্যফ্রন্ট ও বামসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও কিছু পেশাজীবী নেতা ‘সরকার পতন’র দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার করা হয়। এজন্য ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেয়া হয়।

এ কর্মসূচিতে অংশ না নিতে শেষ মুহূর্তে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদ ওই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। এ কারণে তাদের শোকজ করা হয়। হাফিজ উদ্দিনকে ৫ দিন ও শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়।

গত বুধবার রাতে শওকত মাহমুদের একান্ত সহকারী আবদুল মমিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোকজের জবাব পৌঁছে দেন।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।