চৌগাছায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতেই অমুক্তিযোদ্ধার পুত্রবধূ-নাতীদের দিয়ে মানববন্ধন

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ যশোরের চৌগাছায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে কতিপয় অমুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত নয়, সরকারি নির্দেশনায় ভাতা বন্ধ আছে, এমন কিছু ব্যক্তি কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও অসত্য বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন যে ব্যক্তির পুত্রবাধূ-নাতনিদের দিয়ে বিক্ষোভ করানো হয়েছে তিনি আদৌ মুক্তিযোদ্ধাই নন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর নেতৃত্বে যাচাই-বাছাইয়ে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও ‘যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা’ ভাতা নিতেন তা প্রমাণিত হওয়ায় ভাতা স্থগিত রয়েছে। তাদের সাথে যে ৫/৭ ব্যক্তি ছিলেন তাদের কেউকেউ মুক্তিযোদ্ধা’ই নন, আবার কেউ যুদ্ধাহত না হয়েও ‘যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’ নিতেন। ‘যুদ্ধাহত নন’ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৪ বছর ধরে তাদের ভাতা স্থগিত রয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় চৌগাছা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার ২২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন ‘বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের স্বাধীনতা, যা অর্জিত হয়েছিল ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। মাত্র ৩ দিন আগে আমরা ৪৯ তম বিজয় দিবস উদযাপন করেছি। আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি, তখন একটি কুচক্রী মহল দেশের বিরুদ্ধে তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার নানা অপকৌশলে মত্ত। ১৯৭১ এর পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আলসামস্ পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন গত ১৮/১২/২০২০ তারিখ শুক্রবার চৌগাছার কতিপয় অমুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত নয়, যাদের ভাতা সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ আছে, তারা চৌগাছা ভাস্কর্য মোড়ে তাদের ৫/৭ জন ব্যক্তি নিয়ে মানববন্ধন করে আমাদের সংগঠনের নেতা চৌগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অশালীন, মনগড়া কিছু বক্তব্য প্রদান করেছে, যা আদৌ সত্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। প্রকৃত পক্ষে ঐ মানববন্ধনে উপস্থিত সকলেই হয় মুক্তিযোদ্ধা নয়, নয়তো যুদ্ধাহত নয়। এরা সকলেই অনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করে আসছিল। তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী তাদের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। ইতোপূর্বে একাধিকবার এ বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, একটি চিহ্নিত মহল বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আব্দুস সালাম এর মান সম্মানকে ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন যাবৎ বারবার পুরোনো একটি ইস্যুকে সামনে এনে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। আর এদের ইন্ধনদাতা ৭১ এর ঘৃণিত চৌগাছার একটি রাজাকার পরিবার। যে পরিবারের নামে একটি বাজারের নামকরণের প্রতিবাদের আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং লিখিত বক্তব্যে স্বাক্ষর করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ঐক্য পরিষদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে রেজাউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, ইমদাদুল হক ছবি, আরজান আলী, আতিয়ার রহমান, মোশারফ হোসেন, পরিতোষ কুমার, রওশন আলী, মোস্তফা জামান, আসাদুজ্জামান, ওলিযার রহমান, আবু বক্কর, আব্দুস সামাদ, সফিয়ার রহমান, রেজাউল ইসলাম, মহিউদ্দিন, তোফায়েল আহমেদ, হায়দার আলী, সহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান আগামী ৯ জানুয়ারী থেকে চৌগাছায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই শুরু হবে। যার সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন। এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতেই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি এই বিতর্কিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, চৌগাছার মুক্তিযোদ্ধা নয় এমন ৪ জন এবং মুক্তিযোদ্ধা তবে ‘যুদ্ধাহত নয়’ এমন ২২ জন দীর্ঘদিন যাবৎ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলে আসছিলেন। ২০১৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের নেতৃত্বে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই করে তাদের ভাতা স্থগিত করে দেন। তারা গত চার বছর ধরে ভাতা পাচ্ছেন না। ওইসব ব্যক্তিরা আশংকা করছেন চুড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ে চুড়ান্তভাবে তাদের জাল জালিয়াতি ধরা পড়ে যাবে এবং তারা মুক্তিযোদ্ধা বা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাবেন। এ কারনে আর চৌগাছার কয়ারপাড়া গ্রামের ওই রাজাকার পরিবারের উস্কানিতে যিনি মুক্তিযোদ্ধা নয় বলে প্রমাণিত সেই চকমআলীর পুত্র, চকমআলীর পুত্রবধূ ও নাতনিদের নিয়ে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।