সাতক্ষীরায় সড়কে ১৫দিনে দুই সাংবাদিকসহ ১৩জনের প্রাণহানী

এসএম শহীদুল ইসলাম: সাতক্ষীরায় গত ১৫ দিনে ৮টি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই সাংবাদিকসহ ১৩জন। এসময় আহত হয়েছেন ২ রাজনৈতিক নেতাসহ আরও অন্তত ১০জন। ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, ২০ ডিসেম্বর দুপুরে ইজিবাইকের ধাক্কায় সাতক্ষীরা নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক শেখ জাহিদ হাসান গুরুতর আহত হয়ে ওইদিন রাতে রাজধানী ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সড়কের পাশে সাইনবোর্ড স্থাপনের জন্য কংক্রিটের থাম্বার শিকের উপর উপর পড়ে গেলে শিক্ষক জাহিদ ঘাড়ে শিকবিদ্ধ হন। একই সাথে তার বুকের পাজরও ভেঙে যায়।

একই দিন রাতে সাতক্ষীরার বিনেরপোতা কামরান ফিলিং স্টেশনের সন্নিকটে খুলনা থেকে পেট্রোল নিয়ে কামরান ফিলিং স্টেশনে আনলোড করে রাস্তায় ওঠার সময় ট্রাকের ট্রাকের হেলপার (নাম পরিচয় জানা যায়নি) চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়।

এদিকে, ১৬ ডিসেম্বর একই স্থানে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় তিনজন। নিহতরা হলেন তালা উপজেলার সুজনসাহা গ্রামের নিরঞ্জন মল্লিকের ছেলে তাপস মল্লিক (২০), খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামের সূর্য্য দেবনাথের ছেলে মিলন দেবনাথ (১৮) ও একই উপজেলার বাঁকা গ্রামের উত্তম সেন এর ছেলে সুব্রত সেন (২২)। তারা সবাই স্বর্ণের দোকানের কারিগর বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাসায় ফেরার সময় ইঞ্জিনভ্যানের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন জেলা সদরের ঝাউডাঙ্গা এলাকার সাংবাদিক মনোরঞ্জন ঘোষ।

সূত্রমতে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কলারোয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক মাদরাসা ছাত্র নিহত হয়। আহত হয় আরও একজন। নিহত মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র আরিফুল ইসলাম আরিফ (১৭) কলারোয়া উপজেলার রায়টা বিশ্বাসপাড়া এলাকার আব্দুল খালেকের পুত্র। আহত ছাত্রের নাম জাহাঙ্গীর হোসেন (২০)। তার বাড়ি উপজেলার মেহমানপুর গ্রামে। মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিন ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয় আরিফ। এরআগে ৯ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার ভোমরায় ট্রাক-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয় দুইজন। নিহতদের মধ্যে একজন ব্যবসায়ি ও অপরজন ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক। নিহতরা হলেন, সিএ-এফ এজেন্ট যশোর জেলার নওয়াপাড়ার সেন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী সাধন সেন ও সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক কবীর হোসেন। এসময় গুরুতর জখম সাধন সেনের ব্যবসায়িক পার্টনারকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

৬ ডিসেম্বর জেলার পাটকেলঘাটায় পিকআপ-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন সাংবাদিক মহিদুল ইসলাম (৩৬)। তিনি সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মুক্ত স্বাধীন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহত সাংবাদিক মহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল গ্রামের মুজিদ বিশ্বাসের ছেলে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাতক্ষীরা শহরে ৫০ বছর আগে যে সড়ক ছিল এখনো তাই আছে, কিন্তু জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলাতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া একই সড়কে ইঞ্জিনভ্যান, ব্যাটারি ভ্যান, ইজিবাইক, গ্রামবাংলা, টেম্পু, লেগুনা, মাহিদ্রা থ্রি হুইলার, বাস, ট্রাক, পিক-আপ, মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পণ্যবাহন যাতায়াত করে। সড়ক সংকীর্ণ হওয়ার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোকেও দুর্ঘনার জন্য দায়ী করেন তিনি। দুর্বল ট্রাফিকিং ব্যবস্থাও অনেকাংশে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া অদক্ষ চালকের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তিনি সামাজিকভাবে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।