ক্রাইমবাতা ডেস্ক রিপোট: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া আবেদনের ওপর চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে এই আবেদনের ভবিষ্যৎ কী হবে-সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বঙ্গবভনের সংশ্লিষ্টরা।
কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ, আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনেন ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা এ ব্যাপারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে লিখিত দাবি জানান। এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।
এরপর ওই বিশিষ্টজনরা ১৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়টি প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে গুরুতর অসদাচরণে লিপ্ত। তারা গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যা অভিশংসনযোগ্য অপরাধ।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন মঙ্গলবার জানান, তারা আবেদন পেয়েছেন। সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আইন সচিব গোলাম সারোয়ার বলেন, আমাদের কাছে বঙ্গভবন থেকে কোনো বিষয় অবহিত করা হয়নি। নাগরিকদের আবেদন সংক্রান্ত বিষয়াদি পেলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
নাগরিকদের আবেদনের বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে-জানতে চাইলে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমীন উদ্দিন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নেই। ষোড়শ সংশোধনী চূড়ান্ত রায়ের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে উনি (রাষ্ট্রপতি) যদি মনে করেন আবেদন রাখবেন রাখতে পারেন। আর অভিযোগের সারবত্তা না থাকলে ফাইলে রেখে দেবেন।
আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি অভিযোগটির নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন।
এরপর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগ নেবেন। তদন্ত শেষে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পাঠাবেন। দোষী হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে অপসারণের উদ্যোগ নেবেন রাষ্ট্রপতি। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাদের অব্যাহতি দেবেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের বিষয়ে শাহদীন মালিক বলেন, আমি মনে করি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখনও বহাল। ষোড়শ সংশোধনী রায় অনুযায়ী, পূর্বের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখনও বহাল আছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ ফাইল করা হয়েছে। কিন্তু কোনো স্থগিতাদেশ হয়নি। ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহালই।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের ডাকলে যাব। তারা ডাকতে পারে বলেই মনে করি। আমরা তখন অভিযোগের বিষয় তুলে ধরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তা পাঠানোর অনুরোধ করব।
গত শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ড. শাহদীন মালিক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, তদন্তে তারা দোষী হবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের অপসারণ করবেন-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এরপর রোববার উত্থাপিত অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি কেএম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পেন্ডিং আছে। এ অবস্থায় কী মন্তব্য করা যায়-প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ইসির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ : রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনে দু’ধরনের ৯টি অভিযোগ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আর্থিক অনিয়ম ও দ্বিতীয়টি হচ্ছে নির্বাচনী অনিয়ম। দুর্নীতি ও অর্থ সংশ্লিষ্ট তিনটি অভিযোগ হচ্ছে : ১. ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে বক্তৃতা দেয়ার নামে ২ কোটি টাকা নেয়ার মতো আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম, ২. নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার অসদাচরণ ও অনিয়ম এবং ৩. নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনজন কমিশনারের তিনটি গাড়ি ব্যবহারজনিত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়ম। নির্বাচন সংক্রান্ত ৬ অভিযোগ : ১. ইভিএম কেনা ও ব্যবহারে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, ২. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, ৩. ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, ৪. খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম, ৫ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম এবং ৬. সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণ ও অনিয়ম। যুগান্তর